Thursday, July 31, 2014

মৃত্যু উপত্যকা’য় নবারুণ ভট্টাচার্য

চলে গেলেন 'ফ্যাতাড়ু' নবারুণ ভট্টাচার্য


চলে গেলেন 'ফ্যাতাড়ু' নবারুণ ভট্টাচার্য
চিরবিদায় নিলেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা ২০ মিনিটে কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অন্ত্রের ক্যানসারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী ও অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যের একমাত্র সন্তান ছিলেন নবারুণ। তাঁর জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে।
১৯৯৩ সালে হারবার্ট উপন্যাসের জন্য পেয়েছিলেন সাহিত্য একাডেমি সম্মান। এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে নাটক এবং চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিল।

Poem, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নানবারুন ভট্টাচার্য এর ...

www.youtube.com/watch?v=x6IzT0-NolI
২৫ অক্টোবর, ২০১৩ - Harun Rashid আপলোড করেছেন
নবারুন ভট্টাচার্য/‎ জন্ম : ১৯৪৮-এ, বহরমপুরে | বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুন ভট্টাচার্য | পড়াশোনা করেছেন কলকতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্
মারা গেলেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য। বেশ কিছুদিন ধরে অন্ত্রের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আজ বিকেল ৪টে ২০ নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
সাহিত্যিক বিজন ভট্টাচার্য এবং মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য। জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, বহরমপুরে। ১৯৯৩ সালে রচিত হারবার্ট উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পেয়েছেন তিনি। এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে পরে নাটক ও সিনেমাও তৈরি হয়েছে।
নবারুণ ভট্টাচার্যের অন্যান্য রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'কাঙাল মালসাট', 'লুব্ধক', 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না', 'হালালঝান্ডা ও অন্যান্য', 'মহাজনের আয়না', 'ফ্যাতাড়ু', 'রাতের সার্কাস' এবং 'আনাড়ির নারীজ্ঞান'। 

নবারুণ ভট্টাচার্য (২৩ জুন১৯৪৮-) একজন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এবং কবি। লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী ও নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের পুত্র। তার লেখা হারবার্ট বর্তমানে একটি জনপ্রিয় উপন্যাস।[১] চাকরি জীবনে তিনি ১৯৭৩ সালে একটি বিদেশি সংস্থায় যোগ দেন এবং ১৯৯১ পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন। এরপর কিছুদিন বিষ্ণু দে-র ‘সাহিত্যপত্র’ সম্পাদনা করেন এবং ২০০৩ থেকে পরিচালনা করছেন ‘ভাষাবন্ধন’ নামের একটি পত্রিকা। একসময় দীর্ঘদিন ‘নবান্ন’ নাট্যগোষ্ঠী পরিচালনা করতেন।


যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায়
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি-
আটজন মৃতদেহ
চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে
আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি
আট জোড়া খোলা চোখ আমাকে ঘুমের মধ্যে দেখে
আমি চীৎকার করে উঠি
আমাকে তারা ডাকছে অবেলায় উদ্যানে সকল সময়
আমি উন্মাদ হয়ে যাব
আত্মহ্ত্যা করব
যা ইচ্ছা চায় তাই করব।

কবিতা এখনই লেখার সময় 
ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে 
নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে
এখনই কবিতা লেখা যায়
তীব্রতম যন্ত্রনায় ছিন্নভিন্ন মুখে
সন্ত্রাসের মুখোমুখি-ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয়
স্থির দৃষ্টি রেখে
এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায় 
’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে
সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়

লক-আপের পাথর হিম কক্ষে
ময়না তদন্তের হ্যাজাক আলোক কাঁপিয়ে দিয়ে
হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে 
মিথ্যা অশিক্ষার বিদ্যায়তনে
শোষণ ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে
সামরিক-অসামরিক কর্তৃপক্ষের বুকে
কবিতার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হোক
বাংলাদেশের কবিরাও
লোরকার মতো প্রস্তুত থাকুক
হত্যার শ্বাসরোধের লাশ নিখোঁজ হওয়ার স্টেনগানের গুলিতে সেলাই হয়ে 
যাবার জন্য প্রস্তত থাকুক
তবু কবিতার গ্রামাঞ্চল দিয়ে 
কবিতার শহরকে ঘিরে ফেলবার একান্ত দরকার।
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না
আমি আমার দেশকে ফিরে কেড়ে নেব
বুকের মধ্যে টেনে নেব কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল ও ভাসান
সমস্ত শরীর ঘিরে জোনাকি না পাহাড়ে পাহাড়ে জুম
অগণিত হৃদয় শস্য, রূপকথা ফুল নারী নদী
প্রতিটি শহীদের নামে এক একটি তারকার নাম দেব ইচ্ছে মতো
ডেকে নেব টলমলে হাওয়া রৌদ্রের ছায়ায় মাছের চোখের মত দীঘি
ভালোবাসা-যার থেকে আলোকবর্ষ দুরে জন্মাবধি অচ্ছুৎ হয়ে আছি-
তাকেও ডেকে নেব কাছে বিপ্লবের উৎসবের দিন।

হাজার ওয়াট আলো চোখে ফেলে রাত্রিদিন ইনটারোগেশন
মানি না
নখের মধ্যে সূঁচ বরফের চাঙড়ে শুইয়ে রাখা
মানি না
পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যতক্ষণ রক্ত ঝরে নাক দিয়ে
মানি না
ঠোঁটের ওপরে বুট জ্বলন্ত শলাকায় সারা গায় ক্ষত
মানি না
ধারালো চাবুক দিয়ে খন্ড খন্ড রক্তাক্ত পিঠে সহসা আ্যালকোহল
মানি না
নগ্নদেহে ইলেকট্রিক শক কুৎসিৎ বিক্রত যৌন অত্যাচার
মানি না
পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা খুলির সঙ্গে রিভলবার ঠেঁকিয়ে গুলি
মানি না
কবিতা কোন বাধাকে স্বীকার করে না
কবিতা সশস্ত্র কবিতা স্বাধীন কবিতা নির্ভীক।
চেয়ে দেখো মায়কোভস্কি হিকমেত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ার

তোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি 
বরং সারাটা দেশ জুড়ে নতুন একটা মহাকাব্য লেখবার চেষ্টা চলছে
গেরিলা ছন্দে রচিত হতে চলেছে সকল অলংকার।
গর্জে উঠুক দল মাদল
প্রবাল দ্বীপের মত আদিবাসী গ্রাম
রক্তে লাল নীলক্ষেত
শঙ্খচূড়ের বিষ-ফেনা মুখে আহত তিতাস
বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত তৃষ্ঞায় কুচিলা
টণ্কারের সূর্য অন্ধ উৎক্ষিপ্ত গান্ডীবের ছিলা
তীক্ষ্ম তীর হিংস্রতম ফলা-
ভাল্লা তোমার টাঙ্গি পাশ
ঝলকে ঝলকে বল্লম চর-দখলের সড়কি বর্শা
মাদলের তালে তালে রক্তচক্ষু ট্রাইবাল টোটেম
বন্দুক কুরকি দা ও রাশি রাশি সাহস
এত সাহস যে আর ভয় করে না
আরো আছে ক্রেন, দাঁতালো বুলডজার বনভয়ের মিছিল 
চলামান ডাইনামো টারবাইন লেদ ও ইনজিন
ধ্বস-নামা কয়লার মিথেন অন্ধকারে কঠিন হীরার মতো চোখ
আশ্চর্য ইস্পাতের হাতুড়ি
ডক জুটমিল ফার্ণেসের আকাশে উত্তোলিত সহস্র হাত
না ভয় করে না
ভয়ের ফ্যাকাশে মুখ কেমন অচেনা লাগে
যখন জানি মৃত্যু ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়।
আমাকে হ্ত্যা করলে
বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব
আমার বিনাশ নেই-
বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব
আমার বিনাশ নেই-
সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন
মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।


সংগৃহীত

এই কবিতা তাদের উদ্দেশে......যারা শোষিত মানুষের জন্য কাজ করে.......যারা রাষ্ট্রের পোষা ঘৃনীত প্রাণী দ্বারা হ্ত্যার স্বীকার হচ্ছে মাঠে-ঘাটে........যারা এই রাষ্ট্রের লোক দেখানো আইনের প্রচলিত আইন-আদালতটুকুর সুবিচার পাচ্ছে না...........
সে সব রাষ্ট্রের পোষা বাহিনীর কাছে ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধ/এনকাউন্টার খুব আপন.........আর সাধারন নিপীড়ত মানুষ হল রাস্তার নর্দমা.........
রাষ্ট্রের সেইসব পোষা বাহিনীদের জন্য এদেশের অজস্র মানুষের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শুধু একদলা থু থাকবে
আর সে সব নিপীড়িত মানুষের প্রতি সমবেদনা..........

মৃত্যু উপত্যকা’য় নবারুণ ভট্টাচার্য

Wednesday, July 30, 2014

শ্রমিকদের আমরণ অনশন ও কিছু প্রশ্ন

মোশাহিদা সুলতানা ঋতু

শ্রমিকদের আমরণ অনশন ও কিছু প্রশ্ন

জুলাই ৩১, ২০১৪
Moshahida Sultana Rituঈদের দিন বিকাল চারটা। উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় গেলে যে কারও মনে হতে পারে সপ্তম আসমানে এসেছি। কারণ সারা বাংলাদেশে যা ঘটছে তার সঙ্গে এই সপ্তম তলায় কী ঘটছে তার কোনো মিল নেই। টেবিলের উপর চিত হয়ে শুয়ে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা কয়েকজন মেয়ে স্যালাইন নিচ্ছে। এই ছেলেমেয়েদের বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা। সংক্ষেপে চাকা। দেশের অর্থনীতি তাদের ছাড়া অচল। তারা গার্মেন্টস শ্রমিক।
ঈদের আগের দিন অর্থাৎ ২৮ জুলাই থেকে তোবা গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ আমরণ অনশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।এই আমরণ অনশন হঠাৎ করে শুরু হওয়া কোনো পদক্ষেপ নয়। তুবা গ্রুপের ১৬০০ শ্রমিক গত তিন মাস ধরে (২০১৪ এর মে, জুন, জুলাই ) বেতন পায়নি। শ্রমিকেরা এর আগে রাস্তায় নেমেছে, কারখানার সামনে উত্তর বাড্ডার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছে, রাবার বুলেটে আহত হয়ে বার বার হাসপাতালে গিয়েছে। বিজিএমইএ ঘেরাও করেছে, শ্রম মন্ত্রণালয়েও গিয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ তো নেয়ইনি বরং এসব আন্দোলন ধামাচাপা পড়ে গেছে আরও অনেক কিছুর ভিড়ে।
Tuba garments - 1
আর এদিকে গত ২৬ জুন, ২০১৪ তারিখে তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারসহ (মিতা) কারখানার ব্যবস্থাপক এবং খোদ বিজিএমই-এর প্রতিনিধি ফয়েজ আহমেদ, রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে আবদুল আহাদ আনসারী লিখিতভাবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের কাছে অঙ্গীকার করে যে, মে মাসের মজুরি ৩ জুলাই এর মধ্যে, জুন মাসের মজুরি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এবং ঈদ বোনাস ও জুলাই মাসের ১৫ দিনের মজুরি ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রদান করা হবে।
বেতন পাবে এই আশায় কাজ করে যাচ্ছিল শ্রমিকেরা। কিন্তু এত প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত প্রতারণা করা হয়েছে। এর জবাবে রাস্তার আন্দোলন ফেলে কারখানা দখল করে আমরণ অনশনে বসেছে শ্রমিকেরা।
ঈদের দিন বিকাল ৫ টা। সাত মাসের গর্ভবতী মেয়েটির নাম আসমা। তাকে বলা হল বাড়ি চলে যেতে, অনশন না করতে। সে বলল, আমি কই যাব, আমার বাসায় তো তালা। ভাড়া দিতে না পেরে আসমার স্বামী গেছে দেশে, আর এদিকে আসমা অনশনে। বিকাল ৬ টায় আরেক টেবিলে শাহনাজ নামে একটা মেয়েকে দেখা গেল স্যালাইন নিতে নিতে কাঁদছে। তার কান্না থামেই না। শাহনাজ তার ছোট ছেলেটার জন্য কাঁদছিল। তাকে একা বাসায় রেখে চলে এসেছে শাহনাজ। তার হাতে টাকা-পয়সা নেই, সে কোথায় যাবে, অনশন করলে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়!
আসমা ও শাহনাজের মতো আরও অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারছে না, বাড়িওয়ালারা টাকা চাইছে, দোকানে বাকি পড়ে আছে। কোথা থেকে দেবে টাকা, তাদের কি আর কোনো সঞ্চয় আছে? অগত্যা আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ চাকারা গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। তিন মাস ধরে বেতন দেবে বলেও তাদের শেষ পর্যন্ত কিছুই দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের কাজ কিন্তু বন্ধ ছিল না।
এর আগে কোটি কোটি টাকার ওয়ার্ল্ড কাপ জার্সি বানানোর কাজটি কিন্তু এই শ্রমিকেরাই করেছে এবং কাজটি তারা করেছে মালিকের অনুপস্থিতিতেই, অর্থাৎ তুবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের জেলে যাবার পরই।
উল্লেখ্য, তাজরিন গার্মেন্টস পুড়ে যাবার পর দেলোয়ার হোসেনকে ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকে তুবা গ্রুপের কারখানা নিয়মিত চলছিল। মে মাস থেকে তাদের বেতন দেওয়া বন্ধ হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় মালিক দেলোয়ার হোসেনের জামিন না হলে তাদের বেতন দেওয়া হবে না। মালিকপক্ষের এ ধরনের বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, শুধু তাজরিন গার্মেন্টসে শ্রমিকদের পুড়িয়েই এই মালিক ক্ষান্ত হয়নি, জেলে গিয়েও তার পক্ষে শক্তি এখনও ক্রিয়াশীল।
অঙ্গীকার করেও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করার কারণ হিসেবে বিজিএমই-এর লেবার ষ্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আহাদ আলি আনসারী আজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “ব্যাংকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই টাকা তোবা গ্রুপেরই অন্য কারখানা চালাকি করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যায়। ফলে এসব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।”
এখন তারা নাকি তোবা গ্রুপের কারখানা ভবনের ফ্লোর বিক্রি করে কিংবা টিনশেড কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় মজুরি পরিশোধ করতে পারছেন না।
বিজিএমই-এর প্রতিনিধির এই কথাগুলো শ্রমিকদেরকে দেওয়া অঙ্গীকারের মতোই ফাঁপা, স্রেফ দায় এড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলা। প্রথমত প্রশ্ন হল, টাকা যোগাড় কোথা থেকে হবে তা নিশ্চিত না করে বিজিএমইএ শ্রমিকদের লিখিত অঙ্গীকার করল কীভাবে। দ্বিতীয়ত, যদি ধরেও নিই টাকার সংস্থান না করেই বিজিএমইএ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ফাঁপা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে ক্ষেত্রেও এখন টাকার সংস্থান করা বিজিএমই-এর মতো একটা সংস্থার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়।
সবচেয়ে বড় কথা, শ্রমিকদের তিন মাস খাটিয়ে যে গার্মেন্টস পণ্যগুলো উৎপাদন করা হল সেগুলোর বিপরীতে আয় করা টাকাই তো শ্রমিকদের তিন মাসের মজুরির চেয়ে অনেক বেশি। বিজিএমই কি সেই টাকাগুলোর কোনো খবর নিয়েছে? তোবা গ্রুপের মালিকের সব ব্যাংক একাউন্ট কি চেক করেছে?
Tuba garments - 2
কারখানার ফ্লোর বিক্রি বা টিনশেড বিক্রির গালগল্প না ফেঁদে বিজিএমই-এর উচিত বিশ্বকাপের সময় বা তার পরবর্তী মাসগুলোতে তোবা গ্রুপের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা। নইলে শ্রমিকদের মজুরি আটকে দিয়ে তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ারের জামিন আদায় করার জন্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করার যে অভিযোগ শ্রমিকেরা বিজিএমই-এর বিরুদ্ধে তুলছেন সেটাই সত্যি বলে গণ্য হবে।
ঈদের দিন কেউ শখ করে না খেয়ে সারা দিনরাত এমন একটা বিল্ডিং-এ দিন কাটাবে কীসের আশায়? এই মানুষগুলির হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কীভাবে আমরা স্বাধীন দেশে এ রকম সমাজ তৈরি করলাম যেখানে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, আমাদের শ্রমিকশ্রেণি? এই শোষণের সমাজ তৈরির দায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের।
এর দায় থেকে কেউ মুক্ত নয়। তা না হলে এত শ্রমিক পুড়াবার পরও শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ার মতো স্পর্ধা এই দেলোয়ার হোসেন কীভাবে রাখেন? কীভাবে এই অবিচার সম্ভব তা খতিয়ে দেখতে গেলে এখানে দায়ী করতে হবে বিজিএমইএ ও সরকারকে। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের ইন্ধন ছাড়া শ্রমিকদের উপর এমন অবিচারের পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়।
গাড়ির চাকা ব্যবহার শেষ হলে তাদের আর কি দাম থাকে? আমাদের দেশের এই সব চাকাদের সঙ্গে গাড়ির নষ্ট হয়ে যাওয়া চাকাদের কোনো তফাত নেই। এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে স্যালাইন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ৬ জন। নির্লজ্জভাবে এসব চাকাদের মৃতুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন যারা তাদের এই ঈদের আনন্দ কিন্তু বিঘ্নিত হয়নি।
এই আমরণ অনশনের খবর যতটা গুরুত্বসহকারে মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ততটা গুরুত্ব তারা পায়নি। অথচ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে যারা গর্বিত বোধ করেন, তাদের বিবৃতি সময়মতো ফলাও করে প্রচারিত হয় গণমাধ্যমে। এই বৈষম্যের কাছে মাথা নত করেনি তোবা গ্রুপের শ্রমিকেরা।
মাথা উঁচু করে তারা স্লোগান দিয়ে চলেছে হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায়। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরণ অনশন চলবেই।
মোশাহিদা সুলতানা ঋতু: সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গাজার পক্ষে বিশ্ব মুসলিমকে এক হতে হবে: এরশাদ

গাজার পক্ষে বিশ্ব মুসলিমকে এক হতে হবে: এরশাদ