Sunday, March 30, 2014

শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? পলাশ বিশ্বাস

শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? কোনওদিন হয়েছিল? বাংলা তফসিলি উদ্বাস্তুদের সমস্যার যাবতীয় দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রের ঘাড়ে টাপিয়ে দিয়ে নিজ শ্রেণী স্বার্থই রক্ষা করেছেন৷ ডঃ বিধান রায়, জ্যোতি বসু বা প্রমব মুখারিজি কেউই ব্যতিক্রম নয়৷ মতুয়া ভোটে বলিয়ান দিদিও উদ্বাস্তুদের নিয়ে শুধু রাজনীতি করেছেন বাংলার বাইরে যারা যেতে বাধ্য হয়েছেন, বাঙ্গালির কেরামতিতে রাষ্ট্রের রোষে জ্বলতে হলেও নিজ নিজ অন্চলে স্থানীয় জনগণের সাহায্য সহযোগিতার তাংদের অভাব হয়নি এবং শুধু এই কারণেই তাংরা আজও বেঁচে৷ অথচ ভারত ভাগের পর এই বাংলায় যারা থিতু হয়েছেন আদি পশ্চমবঙ্গীয় ব্রাঙ্মণ্য কর্তৃত্বের চোক তাঁরা আজও ঘৃণার পাত্র, সবচেয়ে বড় শত্রু৷ সুতরাং শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে শেষ কথা রাষ্ট্রের, নৈব নৈব চ, রাষ্ট্র নয়, কর্তৃত্বই চিরদিন উদ্বাস্তুদের অধিকার নিয়ে শেষ কথা বলে এসেছে এবং এই জন্যই পৃথীবী সর্বত্র উদ্বাস্তু সমস্যা একদিন শেষ হয়, বাংলায় হবার নয়

পলাশ বিশ্বাস

উদ্বাস্তু স্রোত  থেমে যায়নি। ভারতের স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয়েছে পান্জাবকেও, অথচ পান্জাবিদের জন্য উদ্বাস্তু সমস্যা নেই যেহেতু পান্জাবিরা ও শিখ সম্প্রদায জাতি হিসাবে একতাবদ্ধ ভাবে উদ্বাস্তু সমস্যা যুদ্ধস্তরে সমাধানের জন্য লড়াই করেছিল বাংলায় কিন্তু আজও উদ্বাস্তু সমস্যাকে বাঙ্গালি জাতির সমস্যা মনে করা হয়না। তাই আজও বিচার হয়নি মরিচঝাঁপি গণহত্যার। বাংলার বাইরে অবলীলায় আন্দামান থেকে হিমালয় পর্যন্ত যে তফসিলীদের ফেলে দেওয়া হল, তাঁদের বিরুদ্ধে দেশ ছাড়ো অভিযান শুরু করেন যে ব্রাহ্মণ কুলীন সন্তান প্রণব মুখার্জী. তিনি বাঙ্গালীর গর্ব, সর্বভারতীয় মনুস্মৃতি হিন্দু জায়নবাদী অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত


শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? কোনওদিন হয়েছিল? সমাজবিজ্ঞানীদের ধরণ ধারণ অনেকটাই অর্থনীতিবিদদের মতোই, যার সঙ্গে সমাজবাস্তব বা দায়বদ্ধতার কোনও যোগসূত্র পাওয়া মুশকিল৷তাঁরা নিজেদের মত বলেই খালাস যে অন্য দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা যাতে তাদের প্রাপ্য অধিকারগুলি পায় তা সেই দেশের নিশ্চিত করা উচিত৷ তা না হলে শরণার্থীদের সমস্যায় গোটা দেশই বেসামাল হয়ে পড়তে পারেরবিবার কলকাতায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ ফোর্সড মাইগ্রেশনের এক সভায় এ কথা জানালেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বিষ্ণু মহাপাত্র৷ তিনি বলেন, 'শরণার্থীদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার যদি নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে গোটা দেশই বেসামাল হয়ে যেতে পারে৷ এমনকী অধিকার পাওয়ার জন্য সরকারের নজর টানতে শরণার্থীরা অনেক সময়েই নানাবিধ অপরাধ ঘটিয়ে ফেলে৷' শরণার্থীদের কাছে টেনে নিতে হবে৷ তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে হবে৷ তাহলেই এই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷

কাঁদের এ কথা বলছেন ওরা?শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি যারা করেছে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে, শরণার্থির মহানগর কলকাতাতে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কোথাও কোন আলোচনা হয় না যেখানে, যে রাজ্যে জেলায় জেলায় আদালতে হাজির না করে বাংলাদেশী চিন্হিত করে শয়ে শয়ে হাজারে অন্ত্যজ সংখ্যালঘু অস্পৃশ্য মানুষকে হাজতে পচিয়ে মারা হচ্ছে, ভোটার লিস্ট থেকে ডাউটফুল নাগরিক বলে যেখানে লাখে লাখে মানুষের নাম ভোটার লিষ্ট থকে বিনা বিচারে বাদ দেওয়া হয়, ঝাতি প্রমাণপত্র দেওয়া হয় না, মরিচঝাঁপির গণহত্যার 24 বছর ধরেই নীরবতা অবলম্বন করা হয়, বহির্বঙ্গের ইতিহাস ভূগোল থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ,এমনকি ত্রিপুরার বাঙ্গালিদের কোনও সমস্যা , তাঁদের দ্নযাপন নিয়ে আমরা কোনও খোঁজখবর রাখি না,সেখানে এই ফাঁকা বুলির তাত্পর্য্য বোঝা সত্যিই মুশকিল৷ এই রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে  2003 ও 2005 সালে বর্তমান রাষ্ট্রপতি ব্রাঙ্মণসন্তান প্রণব মুখার্জির পৌরহিত্যে যে লাগরিকত্ব আইন পাস করা হল, তাতে বাঙ্গলার বাইরে পাঁচ কোটির বেশী  পুনর্শবাসিত শরণার্থিদের নাগরিকত্ব বিপর্যস্ত৷ সংস্কারের অবাধ ঙাইওয়ে প্রস্তুত করতে যে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাকরিকত্বের সংবিধানবিরোধী মানবাধিকারলঙ্ঘিত বিধান তার শিকার যারা তাদের নিরানব্বে শতাংশই পূর্ব বঙ্গকে সুনিয়োজিত ভাবে অখন্ড ভারত থেকে কেটে বাদ দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পশ্টিম বাংলায় ও সারা ভারতে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের মনুস্মৃতি ব্যবস্থা ও কর্তৃত্ব কায়েম করার ষড়যন্ত্রের শিকার তফসিলী পূর্ববঙ্গের চাষি৷যাদের অধিকারের দাবিতে বাংলায় আজ অবধি কোনও আন্দোলন  হয়নি৷বরং বাংলার নেতারা তাঁদের ভারত থেকে বিতাড়নের সুবন্দোবস্ত করলেন৷এই ভারতবর্ষে বাঙ্গালি ছাড়া কোথাও কারোও নাগরিকত্ব নিয়ে কারও সংশয় হয় না, কারও পরিচিতি সন্দিগ্ধ হয় না, কেন?বাংলার সঙ্গে ভাগ হয়েছিল পান্জাবও, কিন্তু পান্জাবিদের নাগরিকত্ব নিয়ে আজ কারও প্রশ্ন করার হিম্মত হয়?ভারত ভাগের ফলে, দাঙ্গা পীড়িত 1950 সালে পুনর্বাসিত ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ায় পুনর্বাসিত নোয়াখালি থেকে আসা পুনর্বাসিত বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের নরিবিচারে নো ম্যান্স ল্যান্ডে ফেলে দিয়ে আসা হয় ও বাংলাদেশ স্঵বাবতঃ তাঁদের নিত অস্বাকীর করে, অথছ পাকিস্তান থেকে বর্ণহিন্দু পান্জাবি ও কাশ্মীরি শরণার্থিদের নাগরিকত্বের দাবিতে উত্তাল হয় এই বাংলাও৷ বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের পাহাড়ে, জঙ্গলে, মরুভমিতে, দন্ডকারণ্যে, আন্দামানে জোর জবরদস্তি পাঠিয়ে দেওয়া হল, অথচ   রিফিউজি রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে পান্জাবিদেল নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়ে গেল৷ তাঁরা থাকলেন পান্জাবের আশে পাশে উত্তর ভারতে যূথবদ্ধ ভাবে৷ আসামেও পান্জাবিদের পুনর্বাসন হয়েছে, কই তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে ত কোনও প্রশ্ন হয়নি৷ দাঙ্গার বলি হতে হয়নি তাঁদের৷ সিন্ধিরা সবাই মুম্বাই ও গুজরাতে পুনর্বাসন পেলেন৷তাঁদের শরণার্থী নেতা মনমোহন সিংহ ভারতের ভাগ্যবিধাতা৷লালকৃষ্ণ আডওয়ানী উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, ভাগ্য সহায থাকলে প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতেন তাংদের নাগরিকত্ব , তাঁদের অধিকার নিয়ে কোনো দিন কারও সংশয হয়নি৷আসলে পান্জাবিরা ওবং সিন্ধিরা গোটা জাতি উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে যুদ্ধ তত্পরতায় চিরদিন সক্রিয়৷ এর বিপরীতে প্রত্যেকটি বাঙ্গালি উদ্বাস্তুকে তাংর লড়াঈ তাঁকে একাই লড়তে হয়েছে৷ ওরাঁ শরণার্থির যাবতীয় অধিকার পেয়েছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে আর বাঘ্গালিদের কপালে শুধুই অনুকম্পা, লাথি ঝাঁটা৷বাংলা তফসিলি উদ্বাস্তুদের সমস্যার যাবতীয় দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রের ঘাড়ে টাপিয়ে দিয়ে নিজ শ্রেণী স্বার্থই রক্ষা করেছেন৷ ডঃ বিধান রায়, জ্যোতি বসু বা প্রমব মুখারিজি কেউই ব্যতিক্রম নয়৷ মতুয়া ভোটে বলিয়ান দিদিও উদ্বাস্তুদের নিয়ে শুধু রাজনীতি করেছেন বাংলার বাইরে যারা যেতে বাধ্য হয়েছেন, বাঙ্গালির কেরামতিতে রাষ্ট্রের রোষে জ্বলতে হলেও নিজ নিজ অন্চলে স্থানীয় জনগণের সাহায্য সহযোগিতার তাংদের অভাব হয়নি এবং শুধু এই কারণেই তাংরা আজও বেঁচে৷ অথচ ভারত ভাগের পর এই বাংলায় যারা থিতু হয়েছেন আদি পশ্চমবঙ্গীয় ব্রাঙ্মণ্য কর্তৃত্বের চোক তাঁরা আজও ঘৃণার পাত্র, সবচেয়ে বড় শত্রু৷ সুতরাং শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে শেষ কথা রাষ্ট্রের, নৈব নৈব চ, রাষ্ট্র নয়, কর্তৃত্বই চিরদিন উদ্বাস্তুদের অধিকার নিয়ে শেষ কথা বলে এসেছে এবং এই জন্যই পৃথীবী সর্বত্র উদ্বাস্তু সমস্যা একদিন শেষ হয়, বাংলায় হবার নয়

এ দিন এই আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৪ তম অধিবেশন শুরু হল শহরে৷ এই প্রথমবার সংস্থার অধিবেশন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ উদ্যোক্তা ক্যলকাটা রিসার্চ গ্রুপের কর্তা অধ্যাপক রণবীর সমাদ্দার বলেন, 'এর ফলে বোঝাই যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ ফোর্সড মাইগ্রেশন এই অঞ্চলে জোর করে মানুষকে শরণার্থী বানানোর সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ সম্ভবত, দেশভাগের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই কলকাতা শহর৷ ১৯৭১-এর পরে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছে আশ্রয়ের খোঁজে৷ কলকাতা তাই আক্ষরিক অর্থেই শরণার্থীদের শহর৷' দেশভাগ ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্যও যে বহু মানুষ রাতারাতি ভিটে-বাড়ি চ্যত হচ্ছে তাও উল্লেখ করেছেন রণবীরবাবু৷ আমাদের দেশে এখনও বহু পরিবার যে রাতারাতি শরণার্থী হয়ে পড়ছে, তার একমাত্র কারণ এই উন্নয়নমূলক প্রকল্প৷ যে কোনও প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য জমি দরকার৷ ফলে জমি-বাড়ি হারাচ্ছে মানুষ৷ 

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ ফোর্সড মাইগ্রেশনের প্রেসি‌ডেন্ট ক্রিশ ডোলানের কথায়, দেশভাগের ফলেই কলকাতার জনসংখ্যা এত বেশি৷ এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে হাজির ছিলেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী, সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী প্রমুখ৷ চার দিনের এই অধিবেশন উপলক্ষে কলকাতায় এসেছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা৷

মরিচঝাঁপির গণহত্যার বিচারের দাবি


শমিত আচার্য, ৫ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা

ভারতভাগের জন্য আমরা দায়ী নই। পশ্চিমবঙ্গ কোনো রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রিদের পৈতৃক সম্পত্তি নয় -- তবে কেন আমরা বারবার উচ্ছেদ হচ্ছি? মরিচঝাঁপির উচ্ছেদ হওয়া মানুষেরা আবারও সোচ্চার হল। ৩১ জানুয়ারি মরিচঝাঁপি দিবস উদযাপন করল মরিচঝাঁপি সংগ্রাম সমিতি কলকাতার ভারতসভা হলে। ওই সমস্ত উদ্বাস্তু মানুষেরা পশ্চিমবাংলার বুকে অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। যারা তাদের পুনর্বাসনের দাবিসহ দণ্ডকারণ্যে গিয়ে যারা পুনর্বাসন পান নি, তাদের পুনর্বাসন সহ মরিচঝাঁপিতে যাদের মত্যু হয়েছে, যারা পঙ্গু হয়ে রয়েছে সেই সমস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ, হত্যাকারী ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবিতে এবং উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশকারীর তকমা লাগিয়ে হয়রানি এবং উৎখাতের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রাম গড়ে তুলবেন বলে জানান মরিচঝাঁপি সংগ্রাম সমিতি।
পূর্ব পাকিস্থান থেকে পিঁপড়ের সারির মতো আগত, শুধু বেঁচে থাকার আর্তি সম্বল করে উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিল। এইসব ছিন্নমূল মানুষগুলোর বাসস্থান কোথায় হবে, দণ্ডকারণ্যে না আন্দামানে তা নিয়ে সরব হয়েছিল বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতারা। পশ্চিমবঙ্গেই ওইসব বাঙ্গালিদের পুনর্বাসনে অসংখ্য উদ্বাস্তু কলোনি গড়ে উঠেছিল। শুধু কলকাতা বা শহরতলির আশপাশেই নয়, উত্তরবঙ্গের বহু জায়গাতেই স্থান হয়েছিল তাদের। তারপরেও স্থান সঙ্কুলান করা যায়নি। আন্দামান দ্বীপ কিছুতেই নয়, অতএব বহু পরিবারকে সরকার পাঠিয়েছিল দণ্ডকারণ্যে। কেন্দ্রীয় সরকার দণ্ডকারণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে দায় সঁপে দিয়েছিল এইসব নিম্নবর্গীয় বাঙ্গালি উদ্বাস্তুদের। ১৯৬৪ সালের পর থেকেই বেশ কিছু পরিবার দণ্ডকারণ্য ত্যাগ করে, সম্ভবত তারাই মরিচঝাঁপিতে প্রথম আগত উদ্বাস্তু মানুষ। ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি মরিচঝাঁপির অসহায় নিরন্ন অভুক্ত উদ্বাস্তুদের ওপর রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ গুলি চালিয়ে গণহত্যা ঘটায়। ওই দিনের সভার বক্তাদের কথায় বিবরণে সেদিনের ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও অত্যাচারের বর্ণনা শুনে উপস্থিত নাগরিক মানুষদের হাড় হিম হয়ে আসে। বক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ মরিচঝাঁপির ঘটনাকে জালিয়ানওয়ালাবাগের থেকেও বেশি ভয়াবহ বলে মনে করেন। কারণ জালিয়ানওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ার পার্কের গেট বন্ধ করে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা ঘটায়, এ ঘটনা ছিল তাৎক্ষণিক। মরিচঝাঁপিতে ১৯৭৯ সালের ২৬ থেকে ৩১ জানুয়ারি 'গরিবের স্বার্থরক্ষাকারী' জ্যোতি বসুর সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে, পানীয় জল ও খাবারের সরবরাহ বন্ধ করে দ্বীপে। কয়েকদিন পরেই মরিচঝাঁপির দিকে শুরু হয়ে যায় অনাহারে মৃত্যুর মিছিল। অনাহারের জ্বালায় অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে মানুষের মত্যু ঘটে। বেশ কিছু উদ্বাস্তু কুমীরমারির দিকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানেই উদ্বাস্তুদের গুলি করে মারা হয়। গুলিতে স্থানীয় আদিবাসী মহিলা মেনি মুন্ডার মৃত্যু হয়। অবশেষে ৩১ জানুয়ারি রাজ্য সরকার দেশভাগের বলি অসহায় উদ্বাস্তুদের ওপর গুলি চালিয়ে রক্তস্নান করে। পূর্বে ১৭ মে হাই কোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য করেই খাদ্য পানীয় জল বন্ধ করা হয়েছিল। নৌকা ডুবিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হয়েছিল তারা। ঠিকানাহীন উদ্বাস্তুদের মৃতদেহগুলি গায়েব করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ জানায় বক্তারা। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলির আহত বিকলাঙ্গরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও জীবিত। সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে তারাই আজ গড়ে তুলেছে মরিচঝাঁপি সংগ্রাম সমিতি। 
বক্তারা মরিচঝাঁপি গণহত্যার নায়ক তথাকথিত জননেতা জ্যোতি বসুকে কোনদিনও ক্ষমা করতে পারবেন না বলে জানান। ভারতসভা হলের সেদিনের সভায় মরিচঝাঁপির সংগ্রামী মানুষদের সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিল সর্বস্তরের মানুষেরা।

বাংলা ভাগ : দায় কার

ড. মা হ্ বু ব উ ল্লা হ্

১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববাঙালি সম্মেলন হয়ে গেল। এই উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন বিদেশে বসবাসরত কিছু গুণী বাঙালি ব্যক্তিত্ব। তার সিংহভাগটি এসেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ কোটি। এই ২৫ কোটির মধ্যে ১৬ কোটিরই বাস বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে—ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামের কয়েকটি জেলা এবং ত্রিপুরা রাজ্য। এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে একটি বচন ইদানীং খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যখনই দেশের শাসনক্ষমতায় আসে তখনই এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। কিন্তু নিষ্ঠুর সত্যটি হলো, এপার বাংলা-ওপার বাংলা নয়—ওপার ভারত। আমি যখন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত ছিলাম, তখন দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনে ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী ছাত্র হিসেবে নিমন্ত্রণ পেতাম। সেই সময় ভারতে আমাদের হাইকমিশনার ছিলেন বিশিষ্ট কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী। যতদূর জানি ফারুক চৌধুরী এখন আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা। সংবাদপত্রে তার লেখা প্রকাশিত হলে মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। তার ভাষা সাবলীল, বর্ণনাভঙ্গি চমত্কার এবং তার লেখায় শেখার মতো অনেক কিছুই থাকে। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপরোল্লিখিত একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে ফারুক চৌধুরী দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন—আমি এপার বাংলা-ওপার বাংলা তত্ত্বে বিশ্বাসী নই। ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক ফারাক। স্মৃতির কারণে আমার যদি বিভ্রম না ঘটে থাকে তাহলে বলব, ফারুক চৌধুরী এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।
এবার আরেক টুকরো স্মৃতির কথা বলতে চাই। এই স্মৃতিটি অত্যন্ত মূল্যবান। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সুগন্ধা কার্যালয়ে এক সন্ধ্যায় প্রায় ঘণ্টা তিনেক আলাপ হয়েছিল। অনেক প্রসঙ্গেই তিনি খোলামেলা অনেক কথা বলেছিলেন। তার সঙ্গে দেখা হতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মওলানা সাহেব (মওলানা ভাসানী) কী বলেন। আমার জবাব ছিল, আমার চেয়ে আপনিই তো ভালো জানেন। তিনি তো বলছেন বাংলাদেশ অসম্পূর্ণ। এখনও ১৪টি জেলা বাংলাদেশের বাইরে রয়ে গেছে। ওগুলো বাংলাদেশে এলেই বাংলাদেশ সম্পূর্ণ হবে। আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, এ ব্যাপারে আপনার মত কী। তিনি অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে বললেন, স্লোগানটা প্রিমেচিউর। আগে ওদের দিল্লি থেকে বের হয়ে আসতে দে। তারপর ভেবে দেখব ওদের নেয়া যায় কিনা। তার চিন্তা-ভাবনায় কোনো অস্বচ্ছতা ছিল না। বাঙালির ঐক্য তার কাছে বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভৌম সত্তা বিলীন করে ভারতের বাঙালিদের সঙ্গে এক হয়ে যাওয়া নয়। কোনো দূরভবিষ্যতে বাংলা ভাষাভাষীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রশ্ন উঠলে তার জন্য যে প্রাথমিক শর্তটি পূরণ করতে হবে, তা হলো যেসব বাংলা ভাষাভাষী দিল্লির কর্তৃত্বাধীন রয়েছে তাদের সেই কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হওয়া। অন্যথায় এই ঐক্যের কথা ভাবাই যায় না। যদি অন্য বাংলাভাষীরা দিল্লির কর্তৃত্বমুক্ত হয় তাহলেও শেখ মুজিবুর রহমান তাদের তাত্ক্ষণিকভাবে বরণ করে নেয়ার কথা ভাবেননি। তিনি বলেছিলেন, তারপর দেখব ওদের নেয়া যায় কি-না। বাংলাভাষীদের জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে আমাদের প্রাজ্ঞ নেতাদের মধ্যে চিন্তার পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। কেন এই পার্থক্য তা নিয়ে খুব গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হয় কিনা সন্দেহ আছে। মওলানা ভাসানী কী কারণে সেই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে অসম্পূর্ণ বলেছিলেন, তা ভাসানী অনুসারীরা তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল কি-না তা আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের ৪০ বছর পূর্ণ হওয়ার ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে একথা উপলব্ধি করা কারোর জন্যই কঠিন নয় যে, বাংলাদেশের ওপর ভারতের আগ্রাসী থাবার ছোবল ক্রমাগতই বিষময় হয়ে উঠছে। মওলানা ভাসানী সেদিন এমন কথা উচ্চারণ করে প্রকারান্তরে যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, ভারতের আগ্রাসী থাবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে প্রতিরোধাত্মক কৌশল হিসেবে সমগ্র বাংলাভাষীকে নিয়ে দিল্লির কর্তৃত্বমুক্ত বৃহত্তর বাংলা গঠনের স্লোগান উঠতে পারে। আমি অবশ্য ব্যক্তিগতগতভাবে এই সম্ভাবনা নাকচ করি। গণচীনের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এক সময় বলেছিলেন, পৃথিবীর তাবত্ বিভক্ত জাতি একদিন ঐক্যবদ্ধ হবে। তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির একত্রীকরণের মধ্য দিয়ে। এখনও গণচীন ও তাইওয়ানের একত্রীকরণ এবং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ সম্ভব হয়নি। তবে রাজনৈতিক পর্যায়ে এসব একত্রীকরণের প্রয়াস আছে। কিন্তু বাংলাভাষীদের একত্রীকরণ আমার কাছে অলীক স্বপ্নমাত্র মনে হয়। এর কারণ বহুবিধ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু ভদ্রলোকদের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য তীব্র গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তাদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার মূল কারণ ছিল, পূর্ববঙ্গের হতদরিদ্র কৃষককুলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও শোষণ হারানোর আশঙ্কা। সেদিন বাংলাদেশকে মায়ের অঙ্গচ্ছেদের সঙ্গে তুলনা করেছিল হিন্দু ভদ্রলোকরা। ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দেয়া হয়। হিন্দু ভদ্রলোক নেতৃত্বের উদ্যোগে দিনটি 'শোক দিবস' হিসেবে পালন করা হয় এবং কলকাতায় ফেডারেল হলের শিলান্যাস করা হয়। এই ফেডারেল হলেই পরবর্তীকালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো। ১৬ অক্টোবরের সভা থেকে স্বদেশি আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় এবং বঙ্গভঙ্গবিরোধীরা 'বন্দেমাতরম'কে রণধ্বনি হিসেবে গ্রহণ করে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতারা ছিলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মতিলাল ঘোষ, আনন্দমোহন বসু, রমেশচন্দ্র দত্ত, বিপীনচন্দ্র পাল, অশ্বিনী কুমার দত্ত, অম্বিকাচরণ মজুমদার ও একে মিত্র। এই প্রসঙ্গে কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ লিখেছেন, 'উভয় বঙ্গের মুসলমানদের ভেতর বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধ আন্দোলনে খুব অল্প সংখ্যক মুসলমান যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ভেতর মিস্টার আবদুর রসুল (ব্যারিস্টার), আবদুল হালীম গজনবী (পরে স্যার আবদুল হালীম গজনবী), মৌলভী মনিরুজ্জামান ইসলাম আজাদী, মৌলভী কাজেম আলী (কাজেম আলী মাস্টার নামে খ্যাত ছিলেন), সৈয়দ ইসমাইল হোসাইন সিরাজী, বর্ধমানের মৌলভী আবুল কাশেম, মৌলভী মুজিবুর রহমান (দি মুসলমান নামক ইংরেজি সাপ্তাহিকের সম্পাদক), মৌলভী মুহম্মদ আকরম খাঁ (তখন ঢাকার 'আজাদ' পত্রিকার মালিক), পাটনার মিস্টার আলী ইমাম (পরে স্যার আলী ইমাম), তার ভ্রাতা মিস্টার হাসসান ইমাম, মিস্টার মুজহারুল হক ব্যারিস্টার (পরে পাটনার সাদাকত আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা), মৌলভী লিয়াকত হোসাইন, ডাক্তার আবদুল গফুর সিদ্দিকী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
আমি বঙ্গভঙ্গের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো আন্দোলনেই যোগ দিইনি। তখন আমার যে বয়স ছিল তাতে কোনো এক পক্ষে যোগ দিলে আমার জন্য তা মোটেই বেমানান হতো না। আমার বয়সের ছেলেরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। তবে সাম্প্রদায়িক কোনো ব্যাপারে আমি একেবারেই যোগ দিইনি একথা বললে সত্যের অপলাপ করা হবে! বিশেষ মুসলিম দাবি-দাওয়ার সভা-সমিতিতে আমি যোগ দিয়েছি। আমি সে সময়ে ধার্মিক মুসলমান ছিলাম। দিনে পাঁচবার নামাজ না পড়লেও রমজানের পুরো মাস উপবাস করতাম।'
বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তার 'আমার সোনার বাংলা' গানটি ৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৫ (২২ ভাদ্র ১৩১২) সঞ্জিবনী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ৭ আগস্ট ১৯০৫ কলকাতা টাউন হলের সভায় এই গানটি বাউল সুরে গীত হয়েছিল। বর্তমানে এই গানটিই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গে ক্ষুব্ধ ও আবেগাপ্লুত হয়ে আরও অনেক গান ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তিনি লিখলেন, 'বাঙালির প্রাণ বাঙালির মন/বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন/এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।' এটিই ছিল বিখ্যাত 'রাখিসঙ্গীত'। তিনি আরও লিখলেন, 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!/ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে!/তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে\' জননীরূপী বাংলাদেশের এই অপরূপ ছবি আমাদের মনে স্বদেশপ্রীতির অনুভবকে জাগ্রত করে। এই গানটি স্বদেশপ্রেমের গান হিসেবে বাংলাদেশের নানা অনুষ্ঠানে দরদভরা কণ্ঠে গীত হয়। এই গানটিও রচিত হয়েছিল বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে উজ্জীবিত করতে। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ লিখলেন—'ও আমার দেশের মাটি', 'সার্থক জন্ম আমার' ইত্যাদি। কিন্তু অচিরেই রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করলেন, বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে মুসলমানদের উত্সাহিত বোধ করার কোনো কারণ নেই। তিনি তার 'ব্যাধি ও প্রতিকার' প্রবন্ধে লিখলেন—"আজ আমাদের ইংরেজি পড়া শহরের লোক যখন নিরক্ষর গ্রামের লোকের কাছে গিয়ে বলে, 'আমরা উভয়েই ভাই'—তখন এই ভাই কথাটির মানে সে বেচারা কিছুই বুঝিতে পারে না। যাহাদিগকে আমরা 'চাষাবেটা' বলিয়া জানি, যাহাদের সুখদুঃখের মূল্য আমাদের কাছে অতি সামান্য, যাহাদের অবস্থা জানিতে হইলে আমাদিগকে গভর্নমেন্টের প্রকাশিত তথ্যতালিকা পড়িতে হয়, সুদিনে দুর্দিনে আমরা যাহাদের ছায়া মাড়াই না, আজ হঠাত্ ইংরেজের প্রতি স্পর্ধা প্রকাশ করিবার বেলায় তাহাদের নিকট ভাই সম্পর্কের পরিচয় দিয়া তাহাদিগকে চড়া দামে জিনিস কিনিতে ও গুর্খার গুঁতা খাইতে আহ্বান করিলে আমাদের উদ্দেশ্যের প্রতি সন্দেহ জন্মিবার কথা। সন্দেহ জন্মিয়াও ছিল। কোন বিখ্যাত 'স্বদেশী' প্রচারকের নিকট শুনিয়াছি যে পূর্ববঙ্গে মুসলমান শ্রোতারা তাঁহাদের বক্তৃতা শুনিয়া পরস্পর বলাবলি করিয়াছে যে, বাবুরা বোধ করি বিপদে ঠেকিয়াছে। ইহাতে তাহারা বিরক্ত হইয়াছিলেন, কিন্তু চাষা ঠিক বুঝিয়াছিল। বাবুদের স্নেহভাষণের মধ্যে ঠিক সুরটা যে লাগে না তাহা তাহাদের বুঝিতে বিলম্ব হয় নাই। উদ্দেশ্য সাধনের উপলক্ষে প্রেমের সম্বন্ধ পাতাইতে গেলে ক্ষুদ্র ব্যক্তির কাছেও তাহা বিস্বাদ বোধ হয়—সে উদ্দেশ্য খুব বড় হইতে পারে, হউক তাহার নাম 'বয়কট' বা 'স্বরাজ' দেশের উন্নতি বা আর কিছু।" রবীন্দ্রনাথের মতো মানবতাবাদী কবিও বুঝতে পেরেছিলেন, হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কে কোথায় একটা বিরাট দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই জন্যই মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনে একাত্ম হতে পারেনি।
পরবর্তীকালের অভিজ্ঞতা আরও করুণ। ১৯৪৬-৪৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম এবং শরত্ বসু স্বাধীন-সার্বভৌম যুক্তবাংলা গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। যুক্তবাংলার পরিকল্পনাটি ছিল অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। গান্ধী এই পরিকল্পনার প্রতি শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছিলেন। গান্ধী নিজেই স্বীকার করেছেন, কংগ্রেস কার্যকরী কমিটি তাকে শরত্ বসুর পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করায় ভর্ত্সনা করে। সুতরাং তিনি এর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য হন। কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল বাঙালি হিন্দুদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, 'Bengal cannot be isolated from the Indian Union. Talk of a Sovereign Republic of Independent Bengal is a trap to induce the unwary and the unwise to enter the parlour of the Muslim League. The Congress working committee is fully aware of the situation in Bengal, and you need not be afraid at all. Bengal has got to be partitioned, if the non Muslim population is to survive.' এ ব্যাপারে প্যাটেল ও জওহরলাল নেহরুর মধ্যে চিন্তার কোনো পার্থক্য ছিল না। কংগ্রেস নেতা জেবি কৃপালনি আশরাফউদ্দীন চৌধুরীকে লিখেছিলেন, 'All that the Congress seeks to do today is to rescue as many as possible from the threatened domination of the League and Pakistan. It wants to save as much territory for a free Indian Union as possible under the circumstances. It therefore insist upon the division of Bengal and Punjab... I do not see what else Congress can do under the circumstances.' হিন্দু মহাসভা নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিও প্রবলভাবে বাংলাভাগের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার ইচ্ছার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠী। তারা অবিভক্ত স্বাধীন বাংলায় মুসলিম কর্তৃত্বে বাস করার চেয়ে বৃহত্ ভারতের একটি রাজ্যের নাগরিক হওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন। বাংলা ভাগ তাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। ১৯০৫-এ যারা বাংলা ভাগকে মায়ের অঙ্গচ্ছেদের সঙ্গে তুলনা করেছিল, তারাই আবার ১৯৪৭-এ মায়ের অঙ্গচ্ছেদের পক্ষেই দাঁড়াল। আমরা সত্যকে কঠিন বলি। এটি তেমনি এক সত্য ছিল।
বিশ্ববাঙালি সম্মেলনে পঠিত এক প্রবন্ধে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, 'রাজনৈতিক নানা কারণে এবং ইতিহাসের ঘটনাক্রমে প্রাচীন বাংলাদেশ এখন বিভক্ত। কিন্তু বাঙালির একাত্মতার ভিত্তি প্রধানত রাজনৈতিক নয়। সাহিত্য, কাব্য, সঙ্গীত এবং চিন্তানির্ভর সভ্যতার ঐক্যের জোর রাজনীতি থেকে কম নয়। তারই সঙ্গে আছে আমাদের সমাজ চেতনার চিন্তামুখী আলোপ-আলোচনা। তার প্রভাব রাজনীতির ওপর পড়বে না, এমনটি নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু সেই নৈকট্যের ভিত্তি একমাত্র রাজনীতিতে নয়। বিশ্ববাঙালির সম্মেলন সেই একতাটিকে আরেকটু বড় করবে। যেমন করেছিল ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের উত্সব।' পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত আরেক অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের আলোচনায় বললেন, 'ভূমি ভাগ করা যায়, মাকে ভাগ করা যায় না।' অমর্ত্য সেনকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, বাংলা ভাষাভাষীদের ঐক্যের ভিত্তি কেন মূলত রাজনৈতিক নয়। হিন্দু ভদ্রলোকদের রাজনীতি এবং পরবর্তীকালে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার জেদাজেদির ফলেই তো বাংলা ভাগ হয়েছে। শুধু গান গেয়ে, সাহিত্য আলোচনা করে কিংবা উচ্চমার্গের তত্ত্বদর্শনের ব্যবচ্ছেদে লিপ্ত হয়ে এই ভাগ মুছবে না। এই ভাগকে পরম ও চরম বলে মনে করা হয় বলেই অভিন্ন নদীর পানি আটকে দেয়া হয়, সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রতি উপহাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্যসামগ্রী নেয়ার জন্য বছরে ১ লাখ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। বিভেদের এই মৌলিক কারণগুলো দূর না করে শুধু উত্সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে কী কাজে আসবে?
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ullah@yahoo.com

অবগুণ্ঠন উন্মোচন : আসিফ আরসালান
সপ্তম সংশোধনীর রায়ে বাংলা ভাগ নেহ্রুই বাংলা ভাগের জন্য দায়ী
১৯৪৭ সালের ৩রা জুন বৃটিশ কমন্স সভায় প্রাইম মিনিস্টার এবং লর্ডসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাঞ্জাব ও বাংলা বিভক্তির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় বলা হয় যে, ভারতবর্ষের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের যেসব প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে সেই সব এলাকা নিয়ে গঠিত হবে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান। হিন্দু প্রধান প্রদেশগুলো নিয়ে গঠিত হবে ভারত। অবশ্য এর সাথে আবার ভৌগোলিক সংলগ্নতার একটি শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। তখন পশ্চিমাঞ্চলে পাঞ্জাব এবং পূর্বাঞ্চলে বাংলা অবিভক্ত ছিলো। বাংলা এবং পাঞ্জাব উভয় প্রদেশেই ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সুতরাং সমগ্র অবিভক্ত পাঞ্জাব এবং সমগ্র অবিভক্ত বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি হয়নি। পাঞ্জাব ভাগ হয়ে হলো- পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব পাঞ্জাব এবং বাংলা ভাগ হয়ে হলো পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা। পাঞ্জাবের আলোচনা আজ এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। তাই আমরা বাংলা বিভক্তির মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি। সেদিন যদি বাংলা অবিভক্ত থাকতো তাহলে ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম তার মধ্যে আজকের ভারতীয় বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গেরও অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি হলো না। কেন হলো না? সেটি এখন অতীত দিনের কথা। সেই কথাটি নিয়ে জাবর কেটে লাভ নাই। কারণ পশ্চিম বাংলা তো আর বাংলাদেশে যোগদান করে বৃহত্তর বাংলা গঠন করবে না। কিন্তু তারপরেও এই কথাটি আর কেউ তোলেনি, তুলেছেন মান্যবর হাইকোর্ট। তুলেছেন সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার সময়। রায়ে ৭০ বছর আগের ইতিহাসে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তাই তখনকার ইতিহাসকে তার সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসা জাতির দায়িত্ব। প্রাসঙ্গিকভাবে একটি কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। এটি ৭০ বছর আগের ইতিহাস। সেই ইতিহাস যারা অবলোকন করেছেন তারা যদি ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান, তাহলে তাদের সেই সময় অন্তত ৩০ বছর বয়সী হতে হবে। সুতরাং ওই সময় যার বয়স হয়েছিলো ৩০ বছর আজ তার বয়স হবে ১০০ বছর। ১০০ বছর বয়সী অর্থাৎ শতায়ু কোনো ব্যক্তি বেঁচে আছেন কিনা জানি না। আর বেঁচে থাকলেও ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার মতো অবস্থা তার নেই। তাই আমাদেরকে পুরাতন দলিলপত্রের ওপরেই নির্ভর করতে হবে।
\ দুই \
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় মুসলিম লীগ। এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সংসদ অর্থাৎ জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এখানে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ছিলো ৩০টি আসন। এই ৩০টি আসনেই জয়লাভ করে মুসলিম লীগ। তারা মুসলমানদের মোট ভোটের ৮৬ শতাংশ ভোট লাভ করেন। প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ছিলো ৪৯৫টি আসন। এখানে মুসলিম লীগ লাভ করে ৪২৩টি আসন। পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান এবং সীমান্ত প্রদেশেও মুসলিম লীগ বিপুল বিজয় লাভ করে। ভারতবর্ষের অন্যান্য হিন্দু প্রধান প্রদেশে কংগ্রেস বিপুল বিজয় লাভ করে। এই দু'টি নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রধান নির্বাচনী ইস্যু ছিলো ভারতের স্বাধীনতা এবং ভারতকে অখন্ড রাখা। পক্ষান্তরে, মুসলিম লীগের প্রধান নির্বাচনী ইস্যু ছিলো মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা, যার নাম হবে পাকিস্তান। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এই বিষয়টি শুধুমাত্র প্রমাণিত নয়, রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো যে, সারা ভারতে হিন্দুদের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন হলো কংগ্রেস এবং মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হলো মুসলিম লীগ। মুসলমানদের অবিসংবাদিত নেতা হলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এই ঘটনা পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনের সাথে অনেকটা মিলে যায়। ওই নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয় যে, পাকিস্তান পিপল্্স্ পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এবং জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো সেই দলের নেতা। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন এবং জনাব শেখ মুজিবুর রহমান সেই রাজনৈতিক দলের অবিসংবাদিত নেতা।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনটি ছিল ভারতের উত্তর পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সপক্ষে জনগণের রায়। পূর্বাঞ্চলে বাংলা ছিলো অখন্ড। অখন্ড বাংলায় মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং মুসলিম লীগ নেতা জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বিরোধী দলে বসে কংগ্রেস। প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন বাবু কিরণ শংকর রায়। সংসদের বাইরে প্রাদেশিক কংগ্রেসের নেতা ছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আপন ভাই শরৎ চন্দ্র বসু। অন্যদিকে শাসক দল মুসলিম লীগের প্রাদেশিক শাখা অর্থাৎ বেঙ্গল মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন জনাব আবুল হাশিম। সেই সময় অবিভক্ত বাংলায় মোট জনসংখ্যার ৫৫.২৯ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। অবশিষ্ট ৪৪.৭১ শতাংশ ছিলেন হিন্দু। সুতরাং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দী এবং মুসলিম লীগ নেতা জনাব আবুল হাশিম লাহোর প্রস্তাবের আলোকে স্বাধীন সার্বভৌম যুক্তবাংলা বা অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। তার এই আন্দোলনে তাকে সক্রিয় সমর্থন দান করেন কংগ্রেস নেতা শরৎ চন্দ্র বসু এবং সংসদের অভ্যন্তরে বিরোধী দলীয় নেতা বাবু কিরণ শংকর রায়। সোহরাওয়ার্দী তার স্বাধীন সার্বভৌম অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য তার নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নার নিকট থেকে অনুমোদন চান। সমগ্র মুসলিম লীগের তরফ থেকে নেতা মিঃ জিন্নাহ তৎক্ষণাৎ স্বাচ্ছন্দ্যে স্বাধীন সার্বভৌম অবিভক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অনুমতি প্রদান করেন। মিঃ জিন্নার এই অনুমোদনের ফলে বাংলার মানুষের মাঝে এই মর্মে বিপুল আশাবাদের সঞ্চার হয় যে, ভারত বর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলে হয়তো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
\ তিন \
সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসেরও অনুমোদনের প্রয়োজন ছিলো। সেই অনুযায়ী প্রাদেশিক অর্থাৎ বঙ্গীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে দিল্লীতে কংগ্রেস হাই কমান্ডের কাছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সমর্থনদানের জন্য কংগ্রেস নেতা পন্ডিত নেহেরুকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু জনগণের নেতা বলে পরিচিত কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু কিরণ শংকরের কাছে যে পত্র দেন সেই পত্র প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলার মানুষের, বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ দিল্লী ও কলিকাতা থেকে যুগপৎ প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক 'স্টেটসম্যানে' ওই পত্রটির ফটোকপি ছাপা হয়। বাংলাদেশে একই বছরের ১১ আগস্ট অধুনালুপ্ত ইংরেজী দৈনিক 'বাংলাদেশ টাইমসে' ওই ফটোকপিটি পুনঃমুদ্রিত হয়। পন্ডিত নেহেরুর ওই পত্রটি নিম্নে হুবহু তুলে দেয়া হলো।
New Delhi
17.5.47
My dear Kiran,
We are gradually or rather rapidly approaching the state of final decision in regard to our immediate future and we should be quite clear in our minds as to what our attitude should be. I am certain that the various proposals put forward by Suhrawardy for a limited, independent Bengal plus joint electorates plus fifty-fifty are dangerous from the point of view of both Bengal and India. Those or similar proposals can only be accepted on the basis of union with India. On any other basis they will lead to infinite troubles and for greater difficulties in the way of future union with India. You will remember the talk we had at Maulana's place sometime back. I hold to that and I am more convinced than ever that we must stick to our guns. If there is no union of Bengal as a whole into India, then there must be a partition of Bengal, and Western Bengal must join the union : This will surely lead to East Bengal also joining the Union before long.
In the crucial days to come I hope, Congressmen in Bengal will hold fast together and stand for this position.
I am entirely opposed to the stand of Calcutta being a so-called free city.
Yours sincerely
Jawaharlal Nehru
চিঠির বাংলা অনুবাদ :
নয়াদিল্লী
১৭ই মে ১৯৪৭
প্রিয় কিরণ,
আমাদের আশু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে আমরা ধীরে ধীরে, বরং বলা যায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি।' এখন আমাদের মনে এ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার যে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে। আমি এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত যে, জনাব সোহরাওয়ার্দী যে সমস্ত প্রস্তাব ইতোমধ্যে উত্থাপন করেছেন সেগুলো ভারত এবং বাংলার ভবিষ্যতের জন্য খুবই বিপজ্জনক। জনাব সোহরাওয়ার্দী উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহের মধ্যে রয়েছে স্বাধীন বাংলা, যুক্ত নির্বাচন এবং ৫০:৫০ অর্থাৎ প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা সাম্য। জনাব সোহরাওয়ার্দীর এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে যদি বাংলা ভারতের সাথে যোগ দেয়। ভারতের সাথে যোগ না দিয়ে অন্য যে কোন ভিত্তিতে এসব প্রস্তাব যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে বাংলা কর্তৃক ভবিষ্যতে ভারত ভুক্তির পথে আরো বড় ধরনের অসুবিধা এবং অনন্ত সমস্যার সৃষ্টি হবে। মওলানা সাহেবের বাসভবনে কিছু দিন আগে আপনার সাথে আমার যে কথা হয়েছিল সে সব কথা হয়তো আপনার মনে আছে। আমি এখনও আমার ওই মতের প্রতি অবিচল। এখন আগের চেয়েও আমার আরো বেশী করে বিশ্বাস হচ্ছে যে, আমাদের দাবির প্রতি আমাদের অনড় থাকতে হবে। যদি সমগ্র বাংলা-ভারতের সাথে যোগ না দেয় তাহলে বাংলাকে ভাগ করতেই হবে এবং পশ্চিমবঙ্গকে অবশ্যই ভারতে যোগ দিতে হবে। যদি এটা ঘটে অর্থাৎ বাংলা ভাগ হয় এবং পশ্চিম বাংলা ভারতে যোগ দেয় তাহলে আর বেশী দিন লাগবে না যেদিন পূর্ববঙ্গও ভারতে যোগ দেবে।
আমি আশা করি আগামী দিনের সংকট সন্ধিক্ষণের মুহূর্তগুলোতে বাংলার কংগ্রেস সদস্যরা আরো বেশী করে ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং এই দাবির প্রতি অবিচল থাকবেন।
কলকাতাকে তথাকথিত ফ্রি সিটি বা মুক্ত নগরী করার দাবির আমি সম্পূর্ণ বিরোধী।
আপনার-
জওহরলাল নেহেরু।
যদি সেদিন সোহরাওয়ার্দী বর্ণিত বৃহত্তর বাংলা গঠিত হতো তাহলে আজকের বাংলাদেশও গঠিত হতো ওই অখন্ড বাংলা নিয়েই। কেন হল না? মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বনগাঁও, বশিরহাট, বারাসাত, পার্বত্য ত্রিপুরা, জলপাইগুঁড়ি, কুচবিহার, সিলেটের করিমগঞ্জ এবং আসামের কাছাড়, হাইলকান্দি ও ধুবড়ি ছাড়া পোকায় খাওয়া পূর্ব বাংলা আমরা পেলাম কেন? পেলাম এ জন্য যে, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নিজেদেরকে প্রথমে বাঙ্গালী হিসেবে গণ্য করেনি। প্রথম বিবেচনায় এনেছে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অর্থাৎ তারা হিন্দু। এবং সেই হিন্দুত্ব বিশাল ভারতের অবশিষ্টাংশের সাথে অধিকতর একাত্মতা বোধ করেছে। করেছে বলেই বাঙ্গালী হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে অর্থাৎ হিন্দু হওয়ার কারণে তারা বৃহত্তর বাংলায় শামিল হয়নি। বরং যশোর, দিনাজপুরসহ অনেক জেলাকে কর্তন করেছে। '৪৭ সালে খন্ডিত বাংলার একাংশ যোগ দিল পাকিস্তানে, অপর অংশ ভারতে।
\ চার\
পন্ডিত নেহেরুর এই পত্রের পর আর নতুন করে কিছু বলার থাকে না। কংগ্রেস হাইকমান্ডের এই নির্দেশ আসার পর সারা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায় সভা সমিতি করে যুক্তবাংলার বিরুদ্ধে এবং বাংলাকে ভাগ করার পক্ষে অসংখ্য মিছিল করেন এবং কয়েকশত জনসভা করেন। আজকের এই লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে বলে ওই সব তথ্য এখানে সন্নিবেশ করা সম্ভব হলো না। তবে শেষ করার আগে শুধু একটি কথা বলতে চাই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাগুলো যদি পূর্ববাংলা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা হয়, তাহলে পশ্চিম দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়া বাংলাদেশে যুক্ত হলো না কেন? ব্রিটিশ সরকারের ৩রা জুনের ভারত বিভক্তি প্ল্যান অনুযায়ী অবিভক্ত ভারতের যেসব এলাকা নিয়ে সেদিনের পূর্ব বাংলা বা আজকের বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার কথা ছিল সেগুলো হলো- ১. চট্টগ্রাম, ২. বরিশাল, ৩. নোয়াখালী, ৪. ফরিদপুর, ৫. ঢাকা, ৬. পাবনা, ৭. বগুড়া, ৮. রাজশাহী, ৯. রংপুর, ১০. ময়মনসিংহ (টাঙ্গাইলসহ) ১১. দিনাজপুর (ভারতীয় দিনাজপুরসহ) ১২. মালদহ, ১৩. মুর্শিদাবাদ, ১৪. নদীয়া, ১৫. যশোর (বনগাঁওসহ), ১৬. কুমিল্লা (ত্রিপুরা জেলা), ১৭. সিলেট (করিমগঞ্জসহ), ১৮. আসামের কাছাড়, ধুবড়ী ও হাইলাকান্দি। কিন্তু আমরা বনগাঁ, বশিরহাট, বারাসাত, করিমগঞ্জ, কাছাড়, ধুবড়ী, হাইলাকান্দি প্রভৃতি মহকুমা/অঞ্চল পাইনি। কেন পাইনি? সেটি একটি লম্বা কাহিনী। আজ শুধু এটুকু বলা যায় যে, এগুলো ছিলো আমাদের ন্যায্য পাওনা। কিন্তু লর্ড মাউন্টব্যাটেন, স্যার সিরিল র্যা ডক্লিফ এবং নেহেরু প্যাটেল চক্রের ষড়যন্ত্রে আমাদেরকে সেই সব এলাকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ওপরে যতোগুলো কথা বলা হলো তার সবগুলোর সপক্ষে আমাদের কাছে গবেষণালব্ধ ঐতিহাসিক দলিলপত্র রয়েছে। আজকের সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের একটি মন্তব্য দিয়ে শেষ করছি। তিনি বলেছেন, সরকারের সব কাজে উচ্চ আদালত নাক গলাবে কিনা সেটি তাদেরকে আরেকবার ভেবে দেখতে হবে। নীতিনির্ধারণী কাজ হলো সরকারের, উচ্চ আদালতের নয়। বাংলাদেশেও ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপন এবং রাজনৈতিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজটি হলো গবেষক, ইতিহাসবিদ এবং রাজনীতিবিদদের, উচ্চ আদালতের নয়।

১৯৪৭ সালে কেন অখন্ড বাংলা স্বাধীন না হয়ে পূর্ব পাকিস্তান হল?

ভারত বিভাগের অব্যবহিত পূর্বে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পক্ষে সোহরাওয়ার্দী জয়লাভ না করলে জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা হতে পারতেন না। কিন্তু জিন্নাহ যখন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা হন, ঠিক ওই একই সময়ে সোহরাওয়ার্দীও এক স্বাধীন যুক্ত বাংলার প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন। জিন্নাহ যুক্ত বাংলা পরিকল্পনা বাংলার মুসলমানদের জন্য মঙ্গলকর হবে মনে করে এর সমর্থন করেন। ১৯৪৭ সালের ২৬ এপ্রিল জিন্নাহর সাথে এক আলাপ-আলোচনায় লর্ড মাউন্টবেটেন তাকে জানান, সোহরাওয়ার্দী 'মনে করেন যে তার পক্ষে যুক্ত বাংলাকে ধরে রাখতে সম্ভব হবে, যদি এটি পাকিস্তান অথবা হিন্দুস্তান কোনোটাতেই যোগদান না করে।' 'টপ সিক্রেট' এই আলাপ-আলোচনা এভাবে লিপিবদ্ধ হয়ঃ 'আমি মি. জিন্নাহকে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম পাকিস্তানের বহিভূêত থেকে যুক্ত বাংলার অবস্থান সম্পর্কে তার কী অভিমত?' কোনো দ্বিধা না করে তিনি বললেনঃ 'আমি আনন্দিত হব। কলকাতা ব্যতীত বাংলার কী মর্যাদা রয়েছে? তাদের (বাঙালিদের) পক্ষে যুক্ত থাকা এবং স্বাধীন থাকাই ভালো হবে। আমি এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ যে এরা আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবে।' আমি তখন বললাম, সোহরাওয়ার্দী বলেছেন­ যদি বাংলা যুক্ত এবং স্বাধীন থাকে তাহলে বাংলা কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। জিন্নাহ উত্তরে বলেনঃ 'সেটাই তো ঠিক, যেমন আমি আপনার কাছে প্রকাশ করেছি, পাকিস্তান কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবে।' (মাউন্টবেটেন পেপারস, লর্ড মাউন্টবেটেন ও জিন্নাহর মধ্যে ১৯৪৭ সালের ২৬ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ইন্টারভিউয়ের রেকর্ড, Nicholas Mansergh, The Transfer of Power, 1942-47, vol. X, পৃঃ ৪৫২-৪৫৩ দ্রঃ) 

১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিলে লর্ড মাউন্টবেটেন নিশ্চিত হন, জিন্নাহ যুক্ত বাংলা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। ওই তারিখে বাংলার গভর্নর বারোসের কাছে এক টেলিগ্রামে তিনি বলেনঃ 'এটা ভুলবেন না যে আমার প্ল্যানে পাকিস্তান অথবা হিন্দুস্তানের অংশ নয় এমন একটি যুক্ত অথচ স্বাধীন বাংলার পথ খোলা রেখেছে। জিন্নাহ এই প্ল্যানের কোনো বিরোধিতা করবে না।' ('টপ সিক্রেট', Mansergh, vol. X,পৃঃ ৪৭২ দ্রঃ) মে মাসে অনুষ্ঠিত ভাইসরয়'স মিটিংয়ে 'ভাইসরয় বলেন ... মি. জিন্নাহ পাকিস্তান থেকে পৃথক একটি স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।' (মাউন্টবেটেন পেপারস, ১৯৪৭ সালের ১ মে, Mansergh, vol. X,পৃঃ ৫১২ দ্রঃ) এমনকি ১৯৪৭ সালের মে মাসের প্রথম দিকে একটি স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য জিন্নাহর সম্মতি সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দী নিঃসংশয় ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ৭ মে 'টপ সিক্রেট' মাউন্টবেটেন পেপারসে উল্লেখ রয়েছেঃ 'মি. সোহরাওয়ার্দী তাকে (গভর্নর বারোসকে) বলেন, মি. জিন্নাহ বলেছেন যে তিনি একটি স্বাধীন বাংলার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে রাজি হবেন।' Mansergh, vol. X,পৃঃ ৬৫৭ দ্রঃ) 
এসব বিষয় পর্যালোচনা করে গ্রন্থকার স্ট্যানলি ওয়ালপার্ট মন্তব্য করেন, 'জিন্নাহ একটি স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠাকল্পে আগ্রহসহকারে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি ছিলেন। কিন্তু নেহরু ও প্যাটেল এই পরিকল্পনাকে কংগ্রেস এবং ভারতীয় স্বার্থের পরিপন্থী বলে অভিসম্পাত বলে মনে করেন এবং ভয় করেন যে মুসলিম প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি যুক্ত 'বাংলাদেশ' ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের সাথে নিবিড়তর সম্পর্ক স্থাপন করবে।' (জিন্নাহ অব পাকিস্তান, পৃঃ ৩২০) শীলা সেন তার গ্রন্থে প্রায় একই ধরনের মত প্রকাশ করেনঃ 'জিন্নাহ এই [যুক্ত বাংলার] পরিকল্পনার বিরুদ্ধাচরণ করেননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ প্রথম থেকেই এর সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে ছিলেন।' 'প্যাটেল ও নেহরুর বিরোধিতা ছিল জেদে পূর্ণ।' (মুসলিম পলিটিকস ইন বেঙ্গল, পৃঃ ২৪৩) 'বাংলার কংগ্রেস নেতাদের কাছে লিখিত বেশ কিছু পত্রে প্যাটেল এই পরিকল্পনাকে নিন্দা করেন। (পৃঃ ১৩০) 

জিন্নাহ জানতেন যে বাঙালি হিন্দুরা মন-প্রাণ দিয়ে যুক্ত বাংলার সমর্থন করে না। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে জিন্নাহ বলেন, 'দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার বেশির ভাগ হিন্দু বাংলার বিভক্তি চায়।' Mansergh, vol. X, পৃঃ ৮৫২ দ্রঃ) ১৯৪৭ সালে জিন্নাহ বাংলায় রেফারেনডাম করার প্রস্তাব করলে ব্রিটিশ কেবিনেট ২০ মে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। Mansergh, vol. X, পৃঃ ৯২১-৯২২ দ্রঃ) ১৯৪৭ সালের ২৮ মে লর্ড মাউন্টবেটন লন্ডনে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ কেবিনেট মিটিংকে অবহিত করেন, জিন্নাহ তাকে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, তার পক্ষে বাংলার বিভক্তি মেনে নেয়া সম্ভব হবে না। Mansergh, vol. X, পৃঃ ১০১৪) 
পক্ষান্তরে হিন্দু মহাসভা যুক্ত বাংলা সম্পর্কে প্রথম থেকেই একটি নেতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করে। নিখিল ভারত হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি যুক্ত বাংলা পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে ছিলেন এবং ভাইসরয় লর্ড মাউন্টবেটনের কাছে তিনি একটি তীব্র প্রতিবাদ পাঠান। ২ মে তারিখে লিখিত একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, 'একটি স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা সম্বন্ধে কিছু এলোমেলো কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এর ভাবার্থ আমাদের কাছে একেবারেই বোধগম্য নয় এবং আমরা এর সমর্থন কোনোভাবেই করি না। আমরা হিন্দুদের কাছে এই পরিকল্পনা কোনো উপকারে আসবে না। 
স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা প্রকৃতপক্ষে একটি পাকিস্তানের রূপ নেবে... আমরা কোনোভাবেই ভারতের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না।' (মাউন্টবেটেন পেপারস Mansergh, vol. X,পৃঃ ৫৫৭ দ্রঃ) সোহরাওয়ার্দী জানতেন, কেন্দ্রীয় কংগ্রেস ছাড়াও হিন্দু মহাসভা যুক্ত বাংলা পরিকল্পনার পরম বিপক্ষে ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ মে ভাইসরয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ঝমড় ঊ. গমপংমললপ-এর কাছে এক পত্রে সোহরাওয়ার্দী লেখেন, 'পার্টিশানের ব্যাপারে হিন্দু মহাসভা হিন্দুদের ধ্যান-ধারণাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।' (Mansergh, vol. X, পৃঃ ৮৩০ দ্রঃ) 
বাঙালি হিন্দুরা তাদের দৃষ্টিতে মনে করে, ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাংলার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে একজন মুসলমান অভিষিক্ত হওয়ার পর বাংলায় রাজনৈতিক প্রাধান্য এরা চিরদিনের জন্য হারিয়েছে। বাংলার কংগ্রেস তাদের তরফ থেকে যুক্ত বাংলা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা চালানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে ভার দেয়নি অথবা কোনো সংস্থা স্থাপনা করেনি। যুক্ত বাংলা পরিকল্পনা কার্যকর না হওয়ার কারণগুলোর বিশ্লেষণ করে শীলা সেন তার গ্রন্থে বলেন, 'সম্পূর্ণ স্বাধীন বাংলা পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার' প্রথম কারণটি হচ্ছে 'কংগ্রেস নেতাদের পুরোপুরি বিরোধিতা'। (পৃঃ ২৪৩) 
যুক্ত বাংলা পরিকল্পনাকে পুরোপুরি অকেজো করে দেয়ার জন্য বাঙালি হিন্দুরা বাংলার বিভক্তি দাবি করে। বাংলার বিভক্তি সম্পর্কে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের মিটিংয়ের আগে বাংলার কংগ্রেস এবং বাংলার হিন্দু মহাসভা বাংলার বিভক্তি দাবি করে। ১৯৪৭ সালের এপ্রিলের প্রথমভাগে প্রাদেশিক হিন্দু কনফারেন্স ঘোষণা করেঃ 'বাংলার হিন্দুদেরকে একটি শক্তিশালী জাতীয় সরকারের অধীনে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করতে হবে।' (অমৃতবাজার পত্রিকা), ৫ এপ্রিল, ১৯৪৭) ১৩ মে সর্দার প্যাটেল বাঙালি হিন্দুদের একজন নেতা কে সি নিয়োগিকে চিঠিতে লেখেনঃ 'সম্পূর্ণ স্বাধীন বাংলার দাবি একটি ফাঁদ, যাতে এমন কি কিরণ শংকরও শরৎ বাবুর সাথে পড়ে যেতে পারেন... বাংলার হিন্দুদের বাঁচানোর একমাত্র পথ বাংলার পার্টিশনের দাবি অব্যাহত রাখা এবং অন্য কিছুতে কর্ণপাত না করা... অমুসলমানদের বাঁচাতে হলে বাংলাকে ভাগ করতেই হবে।' (শীলা সেন, পৃঃ ২৪৪) নেহরু মনে করেন, যুক্ত বাংলা বাস্তবায়িত হলে তার দ্বারা বাঙালি মুসলমানরা বেশি উপকৃত হবে। তার নেতৃত্বাধীনে ভারতীয় কংগ্রেস এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে যুক্ত বাংলার জন্য সোহরাওয়ার্দীর স্বপ্নের যবনিকাপাত ঘটে। বাংলার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় বাঙালি মুসলমানরা কখনো বাংলার বিভক্তিকরণ চায়নি। পক্ষান্তরে বাংলাকে ভাগ করার দাবি সম্পর্কে বাঙালি হিন্দুদের মনোভাব অমৃতবাজার পত্রিকা (৫ এপ্রিল, ১৯৪৭ এভাবে প্রকাশ করেঃ 'এটা শুধু পার্টিশনের প্রশ্ন নয়, এটা হিন্দুদের জীবন মরণের প্রশ্ন।' 
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাংলাকে ভাগ করার প্রশ্নে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কোনো স্থির সিদ্ধান্ত নেয়নি। অবশেষে বাংলার বিভক্তি সম্পর্কে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৯৪৭ সালের ১৭ মে সিদ্ধান্ত নেয়, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদকে দু'টি অংশে মিলিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। মুসলিম সংখ্যাগুরু অধ্যুষিত জেলাগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করবে একটি অংশ এবং অপরটি করবে বাংলার অবশিষ্ট জেলাগুলো। বাংলাকে ভাগ করা হবে, কি হবে না এই মর্মে পরিষদের দু'অংশের সদস্যদের পৃথকভাবে বসে ভোট দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়। যেকোনো অংশের অধিকাংশ সদস্য যদি বাংলা বিভক্তির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাগ হবে। (সংশোধিত খসড়া ঘোষণা, ১৭ মে, ১৯৪৭ সাল, Mansergh, vol. X,পৃঃ ৮৮৪ দ্রঃ) বাংলার পার্টিশনের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পরিষদের সদস্যরা দু'টি ভাগে মিলিত হন। উচ্চবর্ণের হিন্দু সদস্যরা পার্টিশনের পক্ষে ভোট দেন, পক্ষান্তরে মুসলিম সদস্যরা ও তফসিলি সম্প্রদায়ের অনেকে পার্টিশন বিপক্ষে ভোট দেন। 
১৯৪৭ সালের ২০ জুন লর্ড মাউন্টবেটনের কাছে গভর্নর বারোস এক টেলিগ্রাম প্রেরণ করে বাংলার বিভক্তি সম্পর্কে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফল জানিয়ে বলেনঃ 'অদ্য অপরাহ্নে পশ্চিম বঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্যদের পৃথক মিটিংয়ে [পার্টিশনের] পক্ষে ৫৮ ভোট এবং বিপক্ষে ২১ ভোটে সাব্যস্ত হয় যে [বঙ্গ] প্রদেশকে বিভক্ত করতে হবে... অদ্য অপরাহ্নে পূর্ব বঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্যদের পৃথক মিটিংয়ে [পার্টিশনের] বিপক্ষে ১০৬ ভোট এবং পক্ষে ৩৫ ভোটে সাব্যস্ত হয় যে [বঙ্গ] প্রদেশকে বিভক্ত না করা হয়।' Mansergh, vol. XI,পৃঃ ৫৩৬ দ্রঃ) এভাবে বাঙালি হিন্দুদের ভোটে বাংলা দু'টি অংশে বিভক্ত হয়। একটি অংশ অর্থাৎ পশ্চিম বঙ্গ ভারতের সাথে যুক্ত হয় এবং অপর অংশটি অর্থাৎ পূর্ব বঙ্গ পাকিস্তানে যোগদান করে। ফলে যুক্ত বাংলার বাস্তবায়ন ইতিহাসে পর্যবসিত হয় এবং এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দীর আপ্রাণ উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নেই থেকে যায়। সময়ের স্রোতে পূর্ব বঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত হয়। 

লেখকঃ ব্যা রি স্টা র সা লা হ উ দদী ন আ হ ম দ

sahmen97@hotmail.com 

লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারেলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অতিথি অধ্যাপক। 

http://www.dailynayadiganta.com/2007/10/08/fullnews.asp?News_ID=46264&sec=4

সুনীল বাবু: দুই জার্মানী এক হওয়া, আর দুই বাংলা এক হওয়া কি একই জিনিস

লিখেছেন জাতীয়তাবাদী শাহেদ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, বিকেল ০৫:০৪



সুনীল বাবু: দুই জার্মানী এক হওয়া, আর দুই বাংলা এক হওয়া কি একই জিনিস

লিখেছেন জাতীয়তাবাদী শাহেদ ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, বিকেল ০৫:০৪



Click this link...

লেখাটা পড়ে সুনীল বাবুর কথাই চিনতা করছি। বলে কি বাবু

তাকে প্রশ্ন করা হয়, দুই বাংলা কি এক হচ্ছে?

প্রশ্ন: কলকাতা আর ঢাকার বুদ্ধিজীবীরা বাংলার যৌথ সংস্কৃতির কথা বলে থাকেন। কিন্তু আপনি কি মনে করেন না, ধর্ম ভারত আর বাংলাদেশকে পৃথক করে রেখেছে?

উত্তর: হ্যাঁ, ধর্ম একটা বড় বাধা অবশ্যই। ধর্মের প্রশ্নটা ছিল না বলে দুই জার্মানি এক হতে পেরেছিল। কিন্তু আমি কি দুই বাংলার একত্রকরণ চাই? না। যত দিন না মৌলবাদকে বিদায় করা যাচ্ছে সমস্যা আর সংঘাত বাড়বেই। ততদিন বন্ধুবৎসল পড়শি হয়েই কাটানো যাক।


দুই জার্মানীর সাথে দুইবাংলাকে তুলনা করার হাস্যকর প্রয়াস। প্রথম কথা, একই ধর্ম, ভাষা, ইতিহাস, সংকৃতি, ঐতিহ্যের অধিকারী দুই জার্মানীকে ভাগ করেছিল বিদেশীরা, জার্মানরা নয়। এটা করেছিল, বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর, বলতে গেলে জার্মানদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, জোর করে। আর দুই বাংলা ভাগ হয়েছে আমাদের নিজের সিদ্ধান্তে, বুঝেশুনে। এই দুয়ের তুলনা কি এক হলো?

েখানে পড়ুন
Click this link...
http://www.sonarbangladesh.com/blog/jatiotabadi/61460

ফিরে দেখা

১৯৪৭, ১৪ই অগস্ট, রাত বারোটা, পূর্ব বঙ্গ হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান 

প্রতি দিন হু হু করে বাড়তে লাগল বঙ্গের পশ্চিম পারের জনসংখ্যা। নতুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে দলে দলে মানুষ চলে আসতে লাগলেন 'দেশান্তরে'। লক্ষ করার বিষয়, পশ্চিম ও পূর্ব, দুই পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুরা কিন্তু একভাবে এলেন না। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যাঁরা এলেন, এলেন মোটামুটি একসময়েই। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কিন্তু আসতে লাগলেন ঢেউয়ে ঢেউয়ে, বছরে বছরে। '৪০ - '৫০-এর দশক ছাড়িয়ে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরেও, এমনকি আজও সঙ্গোপনে নিয়ত বহমান সেই শরণার্থী-ধারা।
সে সময়ই, ১৯৪৮-এ, University Institute Hall-এ এক ভাষণে পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার উচ্চারণ করেছিলেন এই মোক্ষম সাবধানবাণী:"I warn West Bengal - do not spurn away such a rich racial element when seeking shelter at your doors. They alone can make you great if you utilise these human materials." এ দিকের সাবেক বাসিন্দাদের মনে তখন মিশ্র অনুভূত। 'ওদের' জন্য সহমর্মিতা, আর নিজেদের জন্য ভবিষ্যতের ভয়। কিন্তু বিপন্নতার তাড়নায় যেন এই শরণার্থী-বেশে-আসা প্রতিশ্রুতিময় মানবসম্পদকে পশ্চিমবঙ্গ কৃপার চোখে না দেখে, দূরে ঠেলে না দেয়: এই কথাটিই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যদুনাথ।
না, পশ্চিমবঙ্গ দূরে ঠেলে দেয়নি। ধৈর্য ও সমব্যথার সঙ্গে এই শরণার্থী স্রোতকে জায়গা করে দিয়েছিল। কাজটা ছিল কঠিন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নামমাত্র সাহায্যের বেশি কিছু করেনি। পুরো দায়টাই বহন করেছিল সদ্যোজাত, সদ্যোবিভক্ত, অনভিজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের ব্যবহারে আঞ্চলিক বৈষম্যও ছিল বৈকি। পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের জন্য ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থ ব্যয়িত হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীর জন্য তার এক দশমাংশও হল না। তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ভাষায়, পশ্চিমবঙ্গে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রের খরচ - 'মাথাপিছু দুই বছরে কুড়ি টাকার বেশি নয়।'
প্রসঙ্গত, এমনিতেও বিরাট অর্থনৈতিক সংকটে ছিল সে দিনের পশ্চিমবঙ্গ। পাট ছিল প্রধান কৃষিজাত পণ্য। দেশভাগের সঙ্গে পাট-উত্পাদক অঞলগুলি বেরিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নাগাল থেকে, পড়ে রইল কেবল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, ধুঁকতে থাকা কলকারখানা।
এই সামগ্রিক চাপের মধ্যেও উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের বিপুল দায় যে সে দিনের রাজ্য প্রশাসন পালন করতে পেরেছিল, কেননা এতে বড় একটা ভূমিকা নিল - সমাজ। কত মানুষ যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে। প্রায় একটা সামাজিক আন্দোলন বলা চলে। যে আন্দোলনের ইতিহাস কখনও লেখা হয়নি, হয়তো হবেও না। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নানারকম বাঙ্গালি মিলেমিশে যে একটা নতুন সমাজ তৈরি করে তুলল, তাকে প্রতি দিন সাংস্কৃতিক ভাবে সম্পন্ন করে চলল ঘটি-বাঙাল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, চিংড়ি-ইলিশ বিতর্ক; বেকার সমস্যা বৃদ্ধি; পাড়ার রকের আড্ডার ক্রমবিকাশ; বামপন্থি সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টি।
ঐতিহাসিক ভাবে, আর দুটি বড় ঘটনা ঘটল ক্রমে। ভারতের communist party পশ্চিমবঙ্গে যে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠল, তার পিছনে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল এই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, উদ্বাস্তু colony-এর মানবিকীকরণের কাজ। সবচেয়ে বড় communist সমর্থক বাহিনী তৈরি হয়ে উঠতে লাগল এই নতুন আশ্রিত জনগোষ্ঠির মধ্যে থেকে।
দ্বিতীয়ত, উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে গেল মেয়েদের জীবনে ৷ তীব্র অনটন, আর্থিক দুর্দশা এবং পারিবারিক চাপের মুখে বড় দ্রুত ভেঙ্গে গেল অন্তঃপুরের অবরোধ। বাঙ্গালি মেয়েরা আগেও চাকরি করত, সমাজসেবায় যোগ দিত, কিন্তু সে ছিল হাতে গোনা। ১৯৪৭-এর পর, পরিবারের সব ক'জন সদস্যের কাজের খোঁজে না বেরিয়ে আর উপায় থাকল না। বাঙ্গালি মেয়েদের কাছে নারীশিক্ষা তখন আর পোশাকি বিলাশ নয়, পরিবারকে দাঁড় করানোর একান্ত মলিন বাস্তবে বেরিয়ে পড়ার সিঁড়ি।
পাওয়া, হারানো, এবং নতুন অর্জন: ১৯৪৭, পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেখে গেল আলাদা তিনটি উত্তরাধিকার।
http://talking-bird.blogspot.in/2007_04_17_archive.html


সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ত্বের সংকট এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা

অক্টোবর ১১, ২০১২
Adibasi-1দেশের আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলো বিপদগ্রস্ত। এই বিপদ হলো আত্মপরিচয়ের বিপদ। এই সংকট সৃষ্টির পেছনে আছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্তর্গত শক্তিশালী মেকানিজম।
রামু, টেকনাফ, পটিয়া, উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দির, বিহার ও বসতিতে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু এর আগেও আরো অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটেছে যেগুলো পত্রপত্রিকায় কম প্রচার পেয়েছে। কিছুদিন আগেই দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে হিন্দুদের বসতি্‌ ও উপাসনালয়ের উপরে হামলা হয়েছে। এ-বছরের মার্চ মাসে সাতক্ষিরাতে হিন্দুদের ঘর-বাড়ি, মন্দিরে আক্রমন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা হয়েছে। রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজারেও সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে, প্রথম আলোর (২২/০৯/২০১২) খবর মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে ২০০১-২০১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমেছে ৯ লক্ষ (জনসংখ্যা ৯.২% থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৫%)
এই একই সময়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে 'আদিবাসী' বিষয়ে একটি বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আর ২০১২ সালে আদিবাসী দিবস পালনেই রাষ্ট্রযন্ত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। মাঠে নেমেছে প্রতিক্রিয়াশীল-রক্ষণশীল বাঙ্গালি প্রতিনিধিত্বকারী, যারা বাঙ্গালি জাত্যাভিমানকে আধিপত্যবাদী মনোভাবের মাধ্যমে প্রয়োগ করছে। এই বলয়ের মূল ভাবনা হলো- এই রাষ্ট্রীয় ভূখন্ডে কোন 'আদিবাসী' নেই। পাহাড় আদিবাসীদের নয়, জুম আদিবাসীদের নয়। এসব জায়গায় বাঙ্গালিদের "সম-অধিকার" নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরণের মানসিকতা যারা পোষণ করছে তাদের কাছে '১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি' একটি অন্যায় দলিল। সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে এই গোষ্ঠীর লোকজন যেসব তথ্য-উপাত্ত হাজির করছে সেগুলো ভ্রান্তিপূর্ণ। ঐতিহাসিক ও নৃবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে না গিয়ে, সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ধার না ধেরে, এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারীরা আক্রান্ত করছে আদিবাসী নাগরিকদের।
জাতিসংঘ, আইএলও কনভেশনশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্র অনুযায়ী 'আদিবাসী'র যে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে সেই অনুসারে কোনমতেই বাঙ্গালি জনগণ 'আদিবাসী' নয়। বাঙ্গালি হিসেবে আমরা কোনভাবেই 'আদিবাসী' পরিচয় ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারি না। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষে যদি তাদের জাতি সংস্কৃতিগত বৈশিষ্টকে, ভাষার চর্চাকে অটুট রাখা সম্ভবপর না হয়ে থাকে, তাহলে আমরাই এই পরিণতির জন্য দায়ী। কাপ্তাই প্রকল্প থেকে শুরু করে পাহাড়ে বাঙ্গালি বসতি গড়ে তুলে আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আঘাত করেছি। প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে, বন কেড়ে, ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে যুগ যুগের ঐতিহ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছি। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে আধিপত্যবাদী বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর দুর্বৃত্ত চক্র নানা সময়ে আদিবাসীদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আজ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে তাদের 'আদিবাসী' পরিচয়টি।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন ২০১২ এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী (২৩ এর 'ক' ধারা: "ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী") আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎকে হুমকীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বৈচিত্রের মধ্যে বসবাস আমাদের। অথচ আমাদের সংবিধান সবাইকে বাঙ্গালি বানাতে চায়! কি ভয়াবহ! বাঙ্গালি ভাষার স্বীকৃতি পায়নি বলে লড়াই করেছে। নিপীড়িত হয়েছে বলে স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। আর এই জাতিই আজ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে অন্যান্য জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে পারেনি এই চল্লিশ বছরে!
আজ যখন আদিবাসী জনগোষ্ঠী ১৫ বছর বিলম্বিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি, সংবিধানের মধ্যে জায়গা খুঁজছে, তখন সম-অধিকার আন্দোলনের নামে পার্বত্য অঞ্চলে চলছে স্বার্থান্বেষী মহলের কর্মকান্ড। যারা নিপীড়নবাদী মানসিকতা নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংকট তৈরি করছে, সংখ্যায় তারা কম কিন্তু প্রভাবশালী। এরা তারাই, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়েছে। এরা তারাই যারা, বাঙ্গালি সেটলারদের পাহাড়ে জোরপূর্বক আধিপত্য স্থাপন করেছেন গর্বিত বোধ করে। এরা তারাই যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিকে গত ১৫ বছর ধরেও বাস্তবায়িত করতে দেয় নাই। দেশে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে, তখন আদিবাসী জনগণের প্রতি যে নির্মম অত্যাচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধকর্ম সংঘটিত হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে না কেন?
পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী আর বাঙ্গালি জনগণের ঐক্য-সংহতি স্থাপন করা অতি জরুরি। আত্মপরিচয় কেড়ে নিয়ে আমরা সেই ঐক্য-সংহতি ধবংস হতে দিতে পারি না। আমরা দাবি করি বৈচিত্র-বৈভবে সবাই একসাথে বাঁচি। সকলের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হোক। ১৫ বছরের পুরোনো পার্বত্য শান্তি চুক্তি (১৯৯৭) অবিলম্বে বাস্তবায়ন হোক। সকল জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হোক।
লেখকবৃন্দ
১. সারা হোসেন, আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট।
২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি।
৩. আমেনা মহসীন, শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
৪. গীতিআরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫. নাঈম মোহায়মেন, সম্পাদক, 'চিটাগাং হিল ট্রাকস্ ইন দি ব্লাইন্ড স্পট অফ বাংলাদেশ ন্যাশনালিজম।
৬. মেসবাহ কামাল, মহাসচিব, আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন।
৭. মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৮. মির্জা তাসলিমা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৯. সায়েমা খাতুন, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১০. সাদাফ নুর-এ ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১১. সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১২. জোবাইদা নাসরীন, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৩. মাহমুদুল সুমন, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
১৪. স্বাধীন সেন, সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
১৫. নাসরীন খন্দকার লাবনী, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬. শিরিন লিরা, আইনজীবী।
১৭. জান্নাত-ই-ফেরদৌসী, সাধারন সম্পাদক, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ (আরডিসি)।
১৮. হানা শামস্ আহমেদ, লেখক।
১৯. সঞ্জীব রায়, গণমাধ্যমকর্মী।
http://opinion.bdnews24.com/bangla/2012/10/11/%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%98%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC/


দেশভাগের সাম্প্রতিক ইতিহাস চর্চার আলোকে 'দ্যা মার্জিনাল মেন'

Posted by bangalnama on December 22, 2010
 
 
 
 
 
 
3 Votes

- লিখেছেন ত্রিদিব সন্তপা কুণ্ডু
১৯৯৭ সালে যখন দেশভাগ নিয়ে গবেষণা করব মনস্থির করলাম তখন আমার পাঠ্য তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে ছিল শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তীর বহু আলোচিত/ সমালোচিত বইটি, 'দ্যা মার্জিনাল মেন' (The Marginal Men) বস্তুতপক্ষে এটি কোনো ব্যতিক্রমি ঘটনা নয়। কারণ আমাদের প্রজন্মে যারা দেশভাগ নিয়ে কাজ করছেন এবং আগামী দিনে করবেন তাদের কাছে এটি একেবারে প্রাথমিক বই, যাকে বাদ দিয়ে পূর্বভারতে দেশভাগ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করা শক্ত। ১৯৯০ সালে ঐ বইটি প্রকাশিত হবার পর থেকেই তা গবেষকমহলে এবং সাধারণ পাঠকমহলে অত্যন্ত আদৃত। অধ্যাপক চক্রবর্তীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন বা না হন তাঁকে উপেক্ষা করা শক্ত – 'দ্যা মার্জিন্যাল মেন' বইটির সবচেয়ে বড় সাফল্য বোধহয় এটাই। বিগত সহস্রাব্দের শেষ দিক থেকে দেশভাগের ইতিহাস নিয়ে যে ব্যাপক চর্চা পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয় তার অন্যতম পথিকৃত ছিলেন অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তী। 'দ্যা মার্জিনাল মেন' তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ফসল। মৃত্যুর কিছুকাল আগে তাঁর সঙ্গে তাঁর কল্যাণীর বাসভবনে বেশ কিছুক্ষণ দেশভাগের ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার সৌভাগ্য হয়েছিল। বইটি লিখতে গিয়ে তিনি যে কতটা গভীর ভাবে ঐ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তা অকল্পনীয়। কারণ দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা বা উদ্বাস্তু আন্দোলন নিছকই তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল না, বা কোন intellectual exercise ছিল না, গোটা বিষয়টি তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল।

পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগ নিয়ে চর্চা যে অধ্যাপক চক্রবর্তীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল এমনটা নয়। বিক্ষিপ্ত চর্চা শুরু হয়েছিল কিছুকাল আগে থেকেই। উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার চল্লিশের দশকের শেষ দিকেই ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আগত উদ্বাস্তুদের উপর একটি সমীক্ষা করায় যা থেকে প্রথম পর্বে আগত উদ্বাস্তুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানটি ধরা পরে। পরবর্তীকালে ঐ সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে কান্তি পাকড়াশি তাঁর 
The Uprooted: A Sociological Survey of the Refugees in West Bengal (1971) বইটি লেখেন। এ-প্রসঙ্গে আর একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ১৯৫০ এর দশকের শেষে প্রকাশিত হয় বি.এস. গুহ-র Studies in Social Tension among the Refugees from East Pakistan (1959)। এর পর ১৯৮০-র দশকেCentre for Studies in Social Sciences এর উদ্যোগে বেশ কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়। অশোক সেন, অলোক ব্যানার্জী, প্রণতি চৌধুরী প্রমূখ বেশ কিছু কাজ করেন মূলত CMD-ভূক্ত এলাকায় উদ্বাস্তু আগমন ও তাঁদের বসবাসের ধরণ নিয়ে। এই বিক্ষিপ্ত কাজগুলি উদ্বাস্তু আগমন এবং তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ইস্যুর উপর আলোকপাত করলেও দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু সমস্যাকে একটি বড় ইতিহাসের ক্যানভাসে ধরার চেষ্টা করা হয়নি। সেই চেষ্টা প্রথম লক্ষ্য করা যায় প্রফুল্ল চক্রবর্তীর The Marginal Men-এ। অনেক দিন পর্যন্ত পেশাদার ভারতীয় ঐতিহাসিকরা স্বাধীনোত্তর পর্বের ইতিহাস চর্চা থেকে নিজেদের সচেতন ভাবে সরিয়ে রাখতেই অভ্যস্ত ছিলেন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর পর ১৯৪৭ এর লক্ষণরেখা অতিক্রম করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক চক্রবর্তী ছিলেন সেই বিরল প্রজাতির ঐতিহাসিকদের একজন যিনি সেই লক্ষণরেখা তাঁর সমসাময়িকদের থেকে অনেক আগেই অতিক্রম করে দেশভাগের ইতিহাস চর্চা শুরু করেছিলেন।

'দ্যা মার্জিনাল মেন'-এর প্রকাশ দেশভাগের ইতিহাস চর্চার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক চক্রবর্তী পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিদারুণ দুর্ভোগ, অকল্পনীয় সংগ্রাম এবং বদলে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আদলটিকে ধরার চেষ্টা করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। 'দ্যা মার্জিনাল মেন'-এর কাঠামোটি গড়ে উঠেছে মূলতঃ তিনটি বিষয়কে আশ্রয় করে–

* তিনি অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিদারুণ দুর্ভোগের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন- বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের আগমন, রেলওয়ে প্লাটফর্মে, ক্যাম্পে, কলোনীতে তাঁদের নরকযন্ত্রণা ভোগ, উদাস্তু পুনর্বাসনে সরকারী উদাসীনতা ইত্যাদি তাঁর লেখাতে দারুণভাবে এসেছে।

* তিনি উদ্বাস্তুদের প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি নির্ভরযোগ্য আলেখ্য রচনা করেছেন যার নেতৃত্বে ছিল 
UCRC (United Central Refugee Council) এবং পিছন থেকে তাকে সাহায্য করে বামপন্থী দলগুলি।

* এর উপর ভিত্তি করে বইটির তৃতীয় এবং শেষ অংশে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের এক নতুন ভাষ্য হাজির করেন যা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক বাঁধে। অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তী দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে ভাগ্য বিড়ম্বিত উদ্বাস্তুরা ক্রমশঃ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পরিবর্তনের শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৫০-৬০ এর দশকে উদ্বাস্তুরা তাই রাজ্য রাজনীতিতে বামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান শক্তিবৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হিসাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। উদ্বাস্তু এবং বামপন্থীদের এই বোঝাপড়াই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির চেহারাটিকে দ্রুত বদলে দেয়। প্রথমদিকে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুরা বামপন্থীদের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিল না। বরং ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রতিই তারা অধিকতর আস্থাশীল ছিল। তারা আশা করেছিল যে কংগ্রেস তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা করবে। কিন্তু কংগ্রেস সরকারের কাজকর্মে তারা আশাহত হয় এবং বামপন্থীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। বামপন্থী দলগুলি দ্রুত উদ্বাস্তুদের মধ্যে তাদের সংগঠন বাড়াতে থাকে। ১৯৫৯ সালেই 
UCRC-র নেতৃত্ব CPI এর হাতে চলে যায়। পরবর্তীকালেCPI(M) ঐ সংগঠনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তারা যেমন বামপন্থী দলগুলির নেতৃত্বে পরিচালিত গণ আন্দোলনগুলিতে বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেন তেমনি তাদের নিজস্ব আন্দোলন সংগ্রামগুলিতেও তারা বামপন্থীদের সক্রিয় সমর্থন লাভ করেন। অধ্যাপক চক্রবর্তীর মতে পশ্চিমবঙ্গে CPI বা CPI(M) যথার্থ অর্থে শ্রমিকশ্রেণীর অগ্রগণ্য বাহিনী ছিল না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে সেই অর্থে কোন শ্রমিকশ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না। তাঁর মতে উদ্বাস্তুদের সমর্থন লাভই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের ক্ষমতায় এনেছিল। বামদলগুলি কার্যতঃ উদ্বাস্তুদের ব্যবহার করেছিল তাদের ক্ষমতায় উত্তরণের মই হিসাবে।

অধ্যাপক চক্রবর্তীর এই তত্ত্ব নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বিতর্কিত। এটা বিশ্বাস করা খুব শক্ত যে বামদলগুলি উদ্বাস্তুদের নিছক ব্যবহার করেছিল ক্ষমতায় পৌঁছনোর মই হিসাবে। এছাড়াও
refugee syndrome দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা কতটা যুক্তিযুক্ত সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়। তবে এসব সত্ত্বেও মার্জিনাল মেন-এর গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বস্তুতপক্ষে এই বইটির মধ্য দিয়েই দেশভাগের ইতিহাস চর্চা এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে।

১৯৯০ এর দশকের শেষ দিক থেকেই পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগ নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়, যার পিছনে মার্জিনাল মেন-এর একটি প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। দেশভাগের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে অধ্যাপক চক্রবর্তীর কাজ দেশভাগের ইতিহাস চর্চার ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করে। ঐ কাজের কথা মাথায় রেখে অনেকেই দেশভাগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে দীপেশ চক্রবর্তী "ছেড়ে আসা গ্রাম" এর উপর ভিত্তি করে একটি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখলেন 
("Remembered Villages: Representation of Hindu-Bengali Memories in the Aftermath of the Partition", Economic and Political Weekly, vol.31, no.32, August 10, 1996)। রণবীর সমাদ্দার ১৯৯৭ সালে একটি সংকলন প্রকাশ করেন (Reflections on Partition in the East, New Delhi, Vikash, 1997) যেখানে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সংকলিত হয় যেগুলিতে বাংলায় দেশভাগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লেখেন The Marginal Nation (1999) যেখানে দেশভাগের অন্তঃসারশূন্যতাকে তুলে ধরেন তাঁর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ক্ষেত্রসমীক্ষার উপর ভিত্তি করে।

প্রফুল্ল চক্রবর্তীর মার্জিনাল মেন প্রকাশের ঠিক এক দশক পরে প্রকাশিত হল আর একটি বিশেষ উপযোগী বই, প্রদীপ কুমার বোস সম্পাদিত 'রিফিউজিস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল'। এই বইটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যেগুলি দেশভাগের ইতিহাস চর্চাকে সমৃদ্ধ করে। প্রফুল্ল চক্রবর্তী যে কাজ শুরু করেন তাকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যান পরবর্তী গবেষকরা। মার্জিনাল মেন-পরবর্তী দেশভাগের ইতিহাস চর্চায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন সন্দেহ নাই।

উদ্বাস্তু-বামরাজনীতির গাঁটছড়া, যাকে আশ্রয় করে প্রফুল্ল চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের ভাষ্য রচনা করেছিলেন, তার রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত। তিনি দেখান যে আশির দশক থেকে বিজেপি এবং নব্বই এর দশক থেকে তৃণমূল কংগ্রেস উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে দ্রুত তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে উদ্বাস্তুরা তাদের প্রান্তিক অবস্থান কাটিয়ে উঠতে পারেননি যা ঐ অঞ্চলগুলিকে বামবিরোধী রাজনীতির উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করে। কলকাতা ও শহরতলির হকার উচ্ছেদ অভিযান (অপারেশন সানশাইন নামে যা খ্যাত বা কুখ্যাত) উদ্বাস্তুদের বামরাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে ঠেলে দেয়। যে উদ্বাস্তুরা এক কালে বামফ্রন্টের ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত ছিলেন তাদের একটি বড় অংশ বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঢলে পরে। ১৯৮৯ এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই এই প্রবণতা ক্রমশ পরিষ্কার হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে দমদম লোকসভা কেন্দ্র বামফ্রন্টের হাতছাড়া হয় এবং পরের বছর নদীয়ার কৃষ্ণনগরেও বিজেপি জয় লাভ করে। তিনি উদ্বাস্তুদের এই রাজনৈতিক আনুগত্য পরিবর্তনের তিনটি পর্যায় দেখিয়েছেন। প্রথমে তারা ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। পরে তারা কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারিয়ে বামপন্থীদের পাশে এসে দাঁড়ান। আশির দশকের শেষ দিক থেকে তারাই আবার এক অন্য ধরনের রাজনীতির প্রতি আনুগত্য দেখাতে শুরু করেন যাকে তিনি কনফেশনের রাজনীতি বলে অভিহিত করেছেন। উদ্বাস্তু রাজনৈতিক আনুগত্যের এই সতত পরিবর্তনশীল দিকটি বিশেষ আকর্ষণীয়। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রফুল্ল চক্রবর্তীর তত্ত্বটিকে নতুন করে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। উদ্বাস্তুরা বামেদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল না তারা বামেদের ব্যবহার করেছিল তাদের নিজেদের স্বার্থে সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রফুল্ল চক্রবর্তীকৃত ভাষ্যে উদ্বাস্তু-বাম জোটের উপরই মূল জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কংগ্রেস রাজনীতির দুর্বলতা, গোষ্ঠিদ্বন্দ ইত্যাদি সেভাবে আলোচনায় আসেনি। এই বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করেছেন জয়া চ্যাটার্জী
(The Spoils of Partition: Bengal and India, 1947-1967, CUP, 2007) এবং শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় (Decolonization in South Asia: Meanings of freedom in post-independence West Bengal, Routledge, 2009), তাঁদের সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত দুটি বই-এ ।এই বই দু'টিকে যদি আমরা মার্জিনাল মেন এর পরিপূরক হিসাবে নিই তাহলে আমরা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের একটি অধিকতর পরিষ্কার ছবি পেতে পারি।

মার্জিনাল মেন এর মূল জোর উদ্বাস্তু আন্দোলন, উদ্বাস্তু-বামরাজনীতির জোটবন্ধন এবং তার সূত্র ধরে বামেদের ক্ষমতায় উত্তরণ হলেও তার পটভূমিকা হিসাবে তিনি দেশভাগজনিত দুর্ভোগের একটি প্রাথমিক বিবরণ তুলে ধরেন প্রথম তিনটি অধ্যায়ে যা পরবর্তীকালে ঐ বিষয় নিয়ে নতুন গবেষণাকে উৎসাহিত করে। নব্বই এর শেষদিক থেকে উদ্বাস্তুদের শারীরিক ও মনঃস্ত্বাতিক দুর্ভোগ নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা শুরু হয়। উদ্বাস্তুদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ঐ সময়ের ইতিহাসের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। দেশভাগের অভিজ্ঞতা মেয়েদের কাছে যে অনেকটাই আলাদা ছিল তা বলাই বাহুল্য। লিঙ্গ দৃষ্টিকোণ থেকে মেয়েদের অভিজ্ঞতাকে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন লেখাপত্রের মধ্য দিয়ে। যশোধরা বাগচী, শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত, গার্গী চক্রবর্তী প্রমুখের কাজ এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলা যেতে পারে।

মার্জিনাল মেন প্রকাশের পর দু'দশক পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগের ইতিহাস চর্চার তালিকায় বহু নতুন গ্রন্থের সংযোজন ঘটেছে, বহু নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটেছে। কিন্তু দেশভাগের ইতিহাস চর্চায় এখনও অনেক কিছু বাকী আছে বলেই আমার মনে হয়। দুই বাংলার অভিজ্ঞতাকে এক জায়গায় মেলাতে না পারলে একটি অখণ্ড চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ছাড়া সেধরনের বড় আকারের উদ্যোগ এখনও তেমন চোখে পরে না। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতেই সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেটিই হবে আমার মতে প্রয়াত ঐতিহাসিক প্রফুল্ল চক্রবর্তীর কাজের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন।

তথ্যপঞ্জী :
১) Prafulla K. Chakrabarti, The Marginal Men: The Refugees and the Left Political Syndrome in West Bengal, Kalyani, Lumiere Books, 1990
২) দেশভাগের ইতিহাসচর্চার ধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখতে পারেন 
"The Aftermath of the Partition of Bengal, 1947: A Historiographical Survey"http://bengalpartitionstudies.blogspot.com/2006/08/aftermath-of-partition-of-bengal-1947.html
৩) 
Avijit Dasgupta, "The politics of agitation and confession: displaced Bengalis in West Bengal" in Roy, Sanjay K. (ed.), Refugees and Human Rights, Jaipur and Delhi, Rawat Publications, 2001

মরিচঝাঁপি ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস ঃ একটি প্রিভিউ

Posted by bangalnama on December 31, 2009
 
 
 
 
 
 
Rate This

মরিচঝাঁপি
ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস

সম্পাদনা ঃ মধুময় পাল
প্রকাশক ঃ গাঙচিল
মূল্য ঃ ২৭৫ টাকা

দোসরা জানুয়ারী ২০১০-এ "মরিচঝাঁপিঃ ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস" প্রকাশিত হচ্ছে। দেশভাগের বেদনাদায়ক ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কময় অধ্যায় মরিচঝাঁপি। অন্যতম উপেক্ষিত পর্বও বটে। ১৯৭৮-৭৯ সালে সুন্দরবনের দুর্গম জনহীন দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে দন্ডকারণ্য থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বসতি গড়ার চেষ্টা এবং সরকারের তরফে বিরোধিতার ঘটনা কেউ মনে রেখেছে, কেউ রাখেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লেখালেখি আর প্রতিবাদ সভা হয়েছে। কিন্ত প্রান্তজনের ডাকে সেইদিন হয়ত সেইভাবে সারা দেয়নি বাংলার নাগরিক সমাজ। ঘটনার পর কেটে গেছে সুদীর্ঘ তিরিশ বছর। রিপ ভ্যান উইঙ্কলের ঘুম নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের গণহত্যার প্রাক্কালে ভেঙেছে। ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে মরিচঝাঁপির রক্তাক্ত ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে স্মরণ করেই "মরিচঝাঁপিঃ ছিন্ন দেশ, ছিন্ন ইতিহাস"। সেদিন যারা প্রতিবাদ করেও সাড়া পাননি, তাদের মিলিত কন্ঠস্বর এই সংকলনে। ইতিহাসের সন্ধানে স্বর, প্রতিস্বর, ধবনি, প্রতিধবনি-সকলকেই গুরুত্ব দিতে হয়। তাই সেদিন যারা মরিচঝাঁপিকে থামাননি তাঁদের বক্তব্যও স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। লিখেছেন শৈবাল কুমার গুপ্ত, জ্যোতি বসু, বরুণ সেনগুপ্ত, পান্নালাল দাশগুপ্ত, জ্যোতির্ময় দত্ত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত, দেবপ্রসাদ সরকার, মনোজ ভট্টাচার্য, তুষার ভট্টাচার্য, অমিয়কুমার সামন্ত এবং আরো অনেকে। অনু জালের পূর্বপ্রকাশিত একটি লেখা স্থান পেয়েছে অনূদিত হয়ে। রস মল্লিকের তথ্যবহুল একটি লেখা ঘুরেফিরে মরিচঝাঁপির আলোচনায় উঠে এসেছে। তাই সেই লেখাটিও পরিশিষ্টে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আছে সংবাদপত্রের পাতা থেকে উঠে আসা মরিচঝাঁপি নিয়ে টুকিটাকি। তিরিশ বছর পর দেশভাগের ইতিহাসের সবচেয়ে অনালোচিত পর্বের পাঠ নিতে যারা ইচ্ছুক, সংকলনটি তাদের জন্য।

বাঙালি জাতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাঙালি
Netaji debaditya chatterjee.jpgTagore3 140x190.jpgNazrul 140x190.jpg
Begum Rokeya 140x190.jpgSheikh mujibur rahman1950 140x190.jpg Satyajit Ray.jpg
মোট জনসংখ্যা
২৩০,০০০,০০০
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চলসমূহ
~ এই দেশগুলিতে বৃহত্তর জনসংখ্যা রয়েছে: বাংলাদেশ ওভারতে (পশ্চিমবঙ্গ)।
 বাংলাদেশ150,500,000[১]
 ভারত70,000,000[২]
 সৌদি আরব~ 1,000,000[৩]
 সংযুক্ত আরব আমিরাত~ 600,000[৪]
 যুক্তরাজ্য~ 500,000[৫]
 মালয়েশিয়া~ 230,000[৬]
 কুয়েত~ 150,000[৭]
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র~ 143,619[৮]
 দক্ষিন কোরিয়া~ 130,000[৯]
 বাহরাইন~ 120,000
 ওমান~ 115,000[৯]
 কানাডা~ 24,595[১০]
 ইতালি~ 35,000[১১]
 নেপাল~ 23,000[১২]
 অস্ট্রেলিয়া~ 16,000[১৩]
 জাপান~ 11,000[১৪]
ভাষাসমূহ
ধর্ম
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
বাঙালি জাতি হল বঙ্গদেশ অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের অধুনা বাংলাদেশ ও ভারতের কিয়দংশে বিভাজিত এক অঞ্চলে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায় যাদের ইতিহাস অন্ততঃ চার হাজার বছর পুরোনো। এদের ভাষা বাংলা যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর পূর্ব-ইন্দো-আর্য বিভাগের একটি ভাষা। নৃতাত্বিকভাবে এরা একদিকে যেমন ওড়িয়াআসামী, বিহারী ও অন্যান্য পূর্বভারতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীর নিকট আত্মীয়, তেমনই এদের মধ্যে কিয়দংশে মুণ্ডাপ্রোটো-আস্ট্রালয়েডতিব্বতী-বর্মী, অস্ট্রো-এশীয়, এবং দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বংশধারাও মিশে আছে। এর ফলে বাঙালি জাতি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও স্থানভেদে ভিন্ন। এই নৃগোষ্ঠীর সর্বাধিক ঘনত্ব দেখা যায় অধুনা বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যে। তবে এছাড়াও অনেক বাঙালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভারতের আরো নানা রাজ্যে, যেমনঃত্রিপুরাআসামঝাড়খণ্ডবিহারওড়িশাউত্তর প্রদেশমহারাষ্ট্রদিল্লীকর্ণাটক এবং ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলিতে (অরুণাচল প্রদেশমণিপুরমেঘালয়মিজোরামনাগাল্যান্ড)। এছাড়াও পাকিস্তানমালয়েশিয়ামায়ানমারমধ্যপ্রাচ্যযুক্তরাজ্যআমেরিকা ইত্যাদি দেশে অনেক বাঙালি আছেন।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]ইতিহাস

বাঙালি জাতির ইতিহাসকে আদি বা প্রাচীন, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে ভাগ করা যায়।

[সম্পাদনা]প্রাচীন ইতিহাস

আগে এদেশের সভ্যতাকে অনেকেই অর্বাচিন বলে মনে করলেও বঙ্গদেশে চার হাজারেরো বেশি প্রাচীন তাম্রাশ্ম (chalcolithik) যুগের সভ্যতার নির্দশন পাওয়া গেছে [১৫][১৬] যেখানে দ্রাবিড়, তিব্বতী-বর্মী ও অস্ট্রো-এশীয় নরসম্প্রদায়ের বাস ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বঙ্গ বা বাংলা শব্দটির সঠিক ব্যুৎপত্তি জানা নেই তবে অনেকে মনে করেন এই নামটি এসে থাকতে পারে দ্রাবিড় ভাষী বং নামক একটি গোষ্ঠী থেকে যারা এই অঞ্চলে আনুমানিক ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসবাস করত। [১৭] ডঃ অতুল সুরের মতে "বয়াংসি" অর্থাৎ পক্ষী এদের টোটেম ছিল। আর্যদের আগমনের পর বাংলা ও বিহার অঞ্চল জুড়ে মগধ রাজ্য সংগঠিত হয় খ্রীশষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে। বুদ্ধের সময় মগধ ছিল ভারত উপমহাদেশের চারটি মহাশক্তিশালী রজত্বের অন্যতম ও ষোড়শ মহাজনপদের একটি। বংশেরচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বের সময় মগধের বিস্তার হয় দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল অঞ্চলে। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের সময় আফগানিস্তান ও পারস্যের কিছু অংশও মগধের অধিকারভুক্ত ছিল। বৈদেশিক রচনায় বাংলার প্রথম উল্লেখ দেখা যায় গ্রিকদের লেখায় ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি। তাতে বর্ণিত আছে গাঙ্গেয় সমতলভুমিতে বাসকারী গঙ্গারিডি নামে জাতির শৌর্যবীর্যের কথা যা শুনে মহাবীর আলেক্সান্ডার তাঁর বিশ্ববিজয় অসম্পূর্ণ রেখে বিপাশার পশ্চিম তীর থেকেই প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। গঙ্গারিডি শব্দটি হয়ত গ্রিক Gangahrd (গঙ্গাহৃৎ) থেকে এসে থাকবে— গঙ্গা-হৃৎ অর্থাৎ গঙ্গা হৃদয়ে যে ভুমির।[১৮] খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতকে মগধে গুপ্ত রাজবংশের পত্তন হয়।

[সম্পাদনা]মধ্যযুগ

বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা বলা হয় শশাঙ্ককে যার রাজত্ব ছিল সাতশো শতকের গোড়ার দিকে।[১৯]তারপর কিছুদিন অরাজকতার পর বৌদ্ধ ধর্মী পাল বংশ এখানে চারশো বছর রাজত্ব করে, তারপর অপেক্ষাকৃত কম সময় রাজত্ব করে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মী সেন বংশ। বাংলা অঞ্চলে প্রথম ইসলামের প্রচার হয় দ্বাদশ শতকে সুফী ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা। পরবর্তীতে বাংলা ইসলামীয় রাজত্বের অধিকারভুক্ত হলে বাংলায় প্রায় সব অঞ্চলেই দ্রুত ইসলামের প্রসার ঘটে।[২০] দিল্লীর দাস বংশের সুলতানীর একজন তুর্কী সেনাপতি বক্তিয়ার খলজী সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলার এক বিশাল অংশ দখল করেন। অতঃপর দিল্লীর বিভিন্ন সুলতান রাজবংশ ও বা তাদের অধীনস্থ স্থানীয় সামন্ত রাজারা বাংলায় রজত্ব করে। ষোড়শ শতকে মুঘল সেনাপতি ইসলাম খান বাংলা দখল করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে দিল্লীর মুঘল সরকারের নিযুক্ত শাসকদের হাত ছাড়িয়ে আপাত-স্বাধীন মুর্শিদাবাদের নবাবদের রাজত্ব শুরু হয়, যারা দিল্লীর মুঘল সরকারের শাসন কেবল নামে মাত্র মানত।

[সম্পাদনা]বাংলার নবজাগরণ

বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে উনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মুলতঃ রাজা রামমোহন রায়ের(১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নব জাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরুরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়ে, যদিও এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক হিসাবে পরিচিত হয়েছেন।[২১] উনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম, ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার যা মধ্যয্যগের যুগান্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে।[২২]

[সম্পাদনা]স্বাধীনতা আন্দোলন

বাঙালিরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে খুবই মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত করেন কিছু শিক্ষিত বাঙালি বুদ্ধিজীবী, যাঁদের পুরোধা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাসসত্যেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ইত্যাদি নরমপন্থীরা, এবং পরবর্তীতে বিপ্লবাত্মক ভূমিকায় ঋষিঅরবিন্দ ঘোষ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুরাসবিহারী বসুক্ষুদিরাম বসুপ্রফুল্ল চাকীসূর্য সেন প্রমুখ বীর বিপ্লবীবর্গ।

[সম্পাদনা]বঙ্গভঙ্গ

বঙ্গভঙ্গ ইতিহাসে ঘটে দুবার: ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ রাজত্বকালে বঙ্গভঙ্গ, যাতে উদবেলিত বাঙালির প্রবল প্রতিবাদস্বরূপ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হলে ১৯১১ সালে এই বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। দ্বিতীয়বার বাংলা ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার সময়— বাংলার মুসলিমপ্রধান পূর্ব ভাগ পুর্বপাকিস্তান হিসাবেপাকিস্তানের অংশগত হয় ও হিন্দু প্রধান পশ্চিম ভাগ পশ্চিমবঙ্গ নামে ভারতের অংশ থাকে। পুর্বপাকিস্থান এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর হয় অধুনা স্বাধীনবাংলাদেশ

[সম্পাদনা]বাংলাদেশের জন্ম

এই বিষয়ের জন্য দেখুন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিবন্ধ গুলি।

[সম্পাদনা]বাঙালির লোকাচার

বাঙালিরা শিল্প-সংস্কৃতিতে কৃতিত্বের জন্য বিখ্যাত। নানা বাঙালি লেখক, নাট্যকার, সুরকার, চিত্রকর, এবং চলচ্ছিত্রকাররা ভারতে শিল্প ও কলাচর্চার উন্মেষ ও বিকাশে মুখ্য ভুমিকা রাখেন। উনবিংশ শতকের বাংলার নবজাগরণ মূলে ছিল কিছু ব্রিটিশদের দ্বারা এদেশে পাশ্চাত্যের শিক্ষার ও পাশ্চাত্যীয় আধুনিকমনস্কতার অনুপ্রবেশ। অন্যান্য ভারতীয়দের তুলনায় বাঙালিরা অপেক্ষাকৃত দ্রুত ব্রিটিশদের প্রথা শিখে ফেলেছিল ও ব্রিটিশদের-ই নিজেদের দেশে ব্যবহৃত প্রশাসনব্যবস্থা ও আইনকানুন ইত্যাদির জ্ঞান পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দলনে কাজে লাগিয়েছিল। বাংলার নবজাগরণের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল জায়মান রাজনৈতিক ভারতীয় জাতীয়তার বীজ ও আধুনিক ভারতের কলা ও সংস্কৃতির প্রথম উন্মোচন।বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয় করে এশিয়ায় সাহত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।

[সম্পাদনা]আরো দেখুন

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1.  https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/bg.html#People
  2.  http://www.everyculture.com/wc/Afghanistan-to-Bosnia-Herzegovina/Bengalis.html
  3.  [১]
  4.  http://www.7days.ae/showstory.php?id=62077
  5.  [২]
  6.  [৩]
  7.  [৪]
  8.  US Census 2000 foreign born population by country
  9. ↑ ৯.০ ৯.১ Hasan, Rafiq (November 20, 2003), "4,000 Bangladeshis to return from Oman in December"The Daily Star খণ্ড: 4 (176), r হয়েছে: 2008-12-19
  10.  [৫]
  11.  [৬]
  12.  [৭]
  13.  [৮]
  14.  [国籍別外国人登録者数の推移]
  15.  History of Bangladesh. প্রকাশক: বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
  16.  বাংলাদেশে ৪০০০ বছর পুরোনো মানব বাসস্থানের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের খনন, জিনহুয়া সংবাদ সংস্থা, মার্চ ২০০৬
  17.  (১৯৮৯) প্রাচীন ইতিহাস, ১০০০ খ্রীঃপূঃ-১২০২ খ্রীঃ, জেমস হাইৎস্মান ও রবার্ট এল ওয়ার্ডেন: বাংলাদেশ:এ কান্ট্রি স্টাডি. লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস
  18.  চৌধুরী, এ.এম.. Gangaridaiবাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-08.
  19.  শশাঙ্কবাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
  20.  Islam (in Bengal)বাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
  21.  History of the Bengali-speaking People নিতিশ সেনগুপ্ত, পৃ ২১১, ইউবিএস পাব্লিশার্স' ডিস্ট্রিবিউটার্স প্রাইভেট. লিমিটেড. ISBN 81-7476-355-4
  22.  Calcutta and the Bengal Renaissance - সুমিত সরকার Calcutta, the Living City-তে, সম্পাদকঃ সুকন্ত চৌধুরী, ভলিউম ১, পৃ ৯৫।

Partition of India

From Wikipedia, the free encyclopedia
Colonial India
British Indian Empire
Imperial Entities of India
Dutch India1604–1825
Danish India1620–1869
French India1759–1954
Portuguese India 1510–1961
Casa da Índia1434–1833
Portuguese East India Company1628–1633
British India 1613–1947
East India Company1612–1757
Company rule in India1757–1857
British Raj1858–1947
British rule in Burma1824–1942
1765–1947/48
Partition of India
1947
The Partition of British India was based on the prevailing religions, broadly as shown in this map of 1909
The partition of India (Hindi-Urdu: हिन्दुस्तान का बटवारा (Devanagari) تقسیم ہند (Nastaleeq))[1] was the partition of British India on the basis of religious demographics. This led to the creation of the sovereign states of the Dominion of Pakistan (that later split into theIslamic Republic of Pakistan and the People's Republic of Bangladesh) and the Union of India (later Republic of India). The Indian Independence Act 1947 had decided 15 August 1947 as the appointed date for the partition. However, Pakistan came into existence a day earlier, on 14 August.
The partition of India was set forth in the Indian Independence Act 1947 and resulted in the dissolution of the British Indian Empire and the end of the British Raj. It resulted in a struggle between the newly constituted states of India and Pakistan and displaced up to 12.5 million people with estimates of loss of life varying from several hundred thousand to a million (most estimates of the numbers of people who crossed the boundaries between India and Pakistan in 1947 range between 10 and 12 million).[2] The violent nature of the partition created an atmosphere of mutual hostility and suspicion between India and Pakistan that plagues their relationship to this day.
The partition included the geographical division of the Bengal province into East Bengal, which became part of the Dominion of Pakistan (from 1956, East Pakistan). West Bengal became part of India, and a similar partition of the Punjab province becameWest Punjab (later the Pakistani Punjab and Islamabad Capital Territory) and East Punjab (later the Indian Punjab, as well as Haryana and Himachal Pradesh). The partition agreement also included the division of Indian government assets, including theIndian Civil Service, the Indian Army, the Royal Indian Navy, the Indian railways and the central treasury, and other administrative services.
The two self-governing countries of India and Pakistan legally came into existence at the stroke of midnight on 14–15 August 1947. The ceremonies for the transfer of power were held a day earlier in Karachi, at the time the capital of the new state of Pakistan, so that the last British ViceroyLord Mountbatten of Burma, could attend both the ceremony in Karachi and the ceremony in Delhi. Thus, Pakistan's Independence Day is celebrated on 14 August and India's on 15 August.

Contents

  [hide

[edit]Background

[edit]Late nineteenth and early twentieth century

Train to Pakistan being given a warm send-off. New Delhi railway station, 1947
The All India Muslim League (AIML) had been formed in Dhaka in 1906 by Muslims who were suspicious of the Hindu-majority Indian National Congress. They complained that Muslim members did not have the same rights as Hindu members. A number of different scenarios were proposed at various times. Among the first to make the demand for a separate state was the writer and philosopher Allama Iqbal, who, in his presidential address to the 1930 convention of the Muslim League, proposed a separate nation for Muslims was essential in an otherwise Hindu-dominated Indian subcontinent. According to Iqbal, such a separation was imminent in a near future, according to his vision.
The Sindh Assembly passed a resolution making it a separate nation a demand in 1935. Iqbal, Jouhar and others worked hard to draft a resolution, working with Mohammad Ali Jinnah, who had until then worked for Hindu-Muslim unity and who now was to lead the movement for this new nation. By 1930, Jinnah had begun to despair at the fate of minority communities in a united India and had begun to argue that mainstream parties such as the Congress, of which he was once a member, were insensitive to Muslim interests.
The 1932 Communal Award which seemed to threaten the position of Muslims in Hindu-majority provinces catalysed the resurgence of the Muslim League, with Jinnah as its leader. However, the League did not do well in the 1937 provincial elections, demonstrating the hold of the conservative and local forces at the time.

[edit]1932–1942

In 1940, Jinnah made a statement at the Lahore conference that seemed to call for a separate Muslim country. This idea, though, was taken up by Muslims and particularly by Hindus[citation needed] in the next seven years, and became a more territorial plan. All Muslim political parties including the Khaksar Tehrik and Allama Mashriqi opposed the partition of India[citation needed] Mashriqi was arrested on 19 March 1940.
Savarkar strongly opposed the partition of India. Dr. Babasaheb Ambedkar summaries Savarkar's position, in his Pakistan or The Partition of India as follows,
"Mr. Savarkar... insists that, although there are two nations in India, India shall not be divided into two parts, one for Muslims and the other for the Hindus; that the two nations shall dwell in one country and shall live under the mantle of one single constitution;... In the struggle for political power between the two nations the rule of the game which Mr. Savarkar prescribes is to be one man one vote, be the man Hindu or Muslim. In his scheme a Muslim is to have no advantage which a Hindu does not have. Minority is to be no justification for privilege and majority is to be no ground for penalty. The State will guarantee the Muslims any defined measure of political power in the form of Muslim religion and Muslim culture. But the State will not guarantee secured seats in the Legislature or in the Administration and, if such guarantee is insisted upon by the Muslims, such guaranteed quota is not to exceed their proportion to the general population.[3]"
Rural Sikhs in a long ox-cart train headed towards India. 1947. Margaret Bourke-White.
An old Sikh man carrying his wife. Over 10 million people were uprooted from their homeland and travelled on foot, bullock carts and trains to their promised new home.
Most of the Congress leaders were secularists and resolutely opposed the division of India on the lines of religion. Mohandas Gandhi and Allama Mashriqi believed that Hindus and Muslims could and should live in amity. Gandhi opposed the partition, saying, "My whole soul rebels against the idea that Hinduism and Islam represent two antagonistic cultures and doctrines. To assent to such a doctrine is for me a denial of God."[4]
For years, Gandhi and his adherents struggled to keep Muslims in the Congress Party (a major exit of many Muslim activists began in the 1930s), and in the process enraged both Hindu Nationalists and Indian Muslim nationalists. Gandhi was assassinated soon after Partition by Hindu nationalist Nathuram Godse, who believed that Gandhi was appeasing Muslims at the cost of Hindus[citation needed].
Politicians and community leaders on both sides[citation needed] whipped up mutual suspicion and fear, culminating in dreadful events such as the riots during the Muslim League's Direct Action Day of August 1946 in Kolkata (then "Calcutta"), in which more than 5,000 people were killed and many more injured. As public order broke down all across northern India andBengal, the pressure increased to seek a political partition of territories as a way to avoid a full-scale civil war.

[edit]1942–1946

Mountbatten with a countdown calendar to the Transfer of Power in the background
Until 1940, the definition of Pakistan as demanded by the League was so flexible that it could have been interpreted as a sovereign nation or as a member of a confederated India.
Some historians believe Jinnah intended to use the threat of partition as a bargaining chip in order to gain more independence for the Muslim dominated provinces in the west from the Hindu-dominated center.[5]
Other historians claim that Jinnah's real vision was for a Pakistan that extended into Hindu-majority areas of India, by demanding the inclusion of the East of Punjab and West ofBengal, including Assam, a Hindu-majority region. Jinnah also fought hard for the annexation of Kashmir, a Muslim majority state with Hindu ruler; and the accession of Hyderabad andJunagadh, Hindu-majority states with Muslim rulers.[citation needed]
The British colonial administration did not directly rule all of "India". There were several different political arrangements in existence: Provinces were ruled directly and the Princely States with varying legal arrangements, like paramountcy.
The British Colonial Administration consist of Secretary of State for India, the India Office, the Governor-General of India, and the Indian Civil Service. The British were in favour of keeping the area united. The 1946 Cabinet Mission was sent to try and reach a compromise between Congress and the Muslim League. A compromise proposing a decentralized state with much power given to local governments won initial acceptance, but Nehru was unwilling to accept such a decentralized state and Jinnah soon returned to demanding an independent Pakistan.[6]

[edit]Actual partition, 1947

[edit]Mountbatten Plan

The actual division of British India between the two new dominions was accomplished according to what has come to be known as the 3 June Plan or Mountbatten Plan. It was announced at a press conference by Mountbatten on 3 June 1947, when the date of independence was also announced – 15 August 1947. The plan's main points were:
  • Sikhs, Hindus and Muslims in Punjab and Bengal legislative assemblies would meet and vote for partition. If a simple majority of either group wanted partition, then these provinces would be divided.
  • Sindh was to take its own decision.
  • The fate of North West Frontier Province and Sylhet district of Bengal was to be decided by a referendum.
  • India would be independent by 15 August 1947.
  • The separate independence of Bengal also ruled out.
  • A boundary commission to be set up in case of partition.
The Indian political leaders accepted the Plan on 2 June. It did not deal with the question of the princely states, but on 3 June Mountbatten advised them against remaining independent and urged them to join one of the two new dominions.[7]
The Muslim league's demands for a separate state were thus conceded. The Congress' position on unity was also taken into account while making Pakistan as small as possible. Mountbatten's formula was to divide India and at the same time retain maximum possible unity.
Within British India, the border between India and Pakistan (the Radcliffe Line) was determined by a British Government-commissioned report prepared under the chairmanship of a London barristerSir Cyril Radcliffe. Pakistan came into being with two non-contiguous enclaves, East Pakistan (today Bangladesh) and West Pakistan, separated geographically by India. India was formed out of the majority Hindu regions of British India, and Pakistan from the majority Muslim areas.
Countries of the modern Indian subcontinent
On 18 July 1947, the British Parliament passed the Indian Independence Act that finalized the arrangements for partition and abandoned British suzerainty over the princely states, of which there were several hundred, leaving them free to choose whether to accede to one of the new dominions. The Government of India Act 1935 was adapted to provide a legal framework for the new dominions.
Following its creation as a new country in August 1947, Pakistan applied for membership of the United Nations and was accepted by the General Assembly on 30 September 1947. TheUnion of India continued to have the existing seat as India had been a founding member of the United Nations since 1945.[8]

[edit]Radcliffe Line

the Punjab section of the Radcliffe Line
The Punjab – the region of the five rivers east of IndusJhelumChenabRaviBeas, and Sutlej— consists of interfluvial doabs, or tracts of land lying between two confluent rivers. These are the Sind-Sagar doab (between Indus and Jhelum), the Jech doab (Jhelum/Chenab), the Rechnadoab (Chenab/Ravi), the Bari doab (Ravi/Beas), and the Bist doab (Beas/Sutlej) (see map). In early 1947, in the months leading up to the deliberations of the Punjab Boundary Commission, the main disputed areas appeared to be in the Bari and Bist doabs, although some areas in theRechna doab were claimed by the Congress and Sikhs. In the Bari doab, the districts of Gurdaspur, Amritsar, Lahore, and Montgomery (Sahiwal) were all disputed.[9]
All districts (other than Amritsar, which was 46.5% Muslim) had Muslim majorities; albeit, in Gurdaspur, the Muslim majority, at 51.1%, was slender. At a smaller area-scale, only threetehsils (sub-units of a district) in the Bari doab had non-Muslim majorities. These were: Pathankot (in the extreme north of Gurdaspur, which was not in dispute), and Amritsar and Tarn Taran in Amritsar district. In addition, there were four Muslim-majority tehsils east of Beas-Sutlej (with two where Muslims outnumbered Hindus and Sikhs together).[9]
A map of the Punjab region ca. 1947
The claims (Congress/Sikh and Muslim) and the Boundary Commission Award in the Punjab in relation to Muslim percentage by Tehsils. The unshaded regions are the princely states.
The communities in the disputed regions of the Upper Bari Doab in 1947.
Before the Boundary Commission began formal hearings, governments were set up for the East and the West Punjab regions. Their territories were provisionally divided by "notional division" based on simple district majorities. In both the Punjab and Bengal, the Boundary Commission consisted of two Muslim and two non-Muslim judges with Sir Cyril Radcliffe as a common chairman.[9]
The mission of the Punjab commission was worded generally as the following: "To demarcate the boundaries of the two parts of the Punjab, on the basis of ascertaining the contiguous majority areas of Muslims and non-Muslims. In doing so, it will take into account other factors."[9]
Each side (the Muslims and the Congress/Sikhs) presented its claim through counsel with no liberty to bargain. The judges too had no mandate to compromise and on all major issues they "divided two and two, leaving Sir Cyril Radcliffe the invidious task of making the actual decisions."[9]
Massive population exchanges occurred between the two newly formed states in the months immediately following Partition. Once the lines were established, about 14.5 million people crossed the borders to what they hoped was the relative safety of religious majority. Based on 1951 Census of displaced persons, 7,226,000 Muslims went to Pakistan from India while 7,250,000 Sikhs and Hindus moved to India from Pakistan immediately after partition.[citation needed]
About 11.2 million or 78% of the population transfer took place in the west, with Punjab accounting for most of it; 5.3 million Muslims moved from India to West Punjab in Pakistan, potentially 3.8 million Hindus and Sikhs could have moved from West Pakistan to East Punjab in India but 500,000 had already migrated before the Radcliffe award was announced; elsewhere in the west 1.2 million moved in each direction to and from Sind.
A crowd of Muslims at the Old Fort (Purana Qila) in Delhi, which had been converted into a vast camp for Muslim refugees waiting to be transported to Pakistan. Manchester Guardian, 27 September 1947.
The newly formed governments were completely unequipped to deal with migrations of such staggering magnitude, and massive violence and slaughter occurred on both sides of the border. Estimates of the number of deaths range around roughly 500,000, with low estimates at 200,000 and high estimates at 1,000,000.[10]

[edit]Punjab

The Indian state of East Punjab was created in 1947, when the Partition of India split the former British province of Punjab between India and Pakistan. The mostly Muslim western part of the province became Pakistan's Punjab province; the mostly Sikh and Hindu eastern part became India's East Punjab state. Many Hindus and Sikhs lived in the west, and many Muslims lived in the east, and the fears of all such minorities were so great that the partition saw many people displaced and much intercommunal violence.
Lahore and Amritsar were at the centre of the problem, the Boundary Commission was not sure where to place them – to make them part of India or Pakistan. The Commission decided to give Lahore to Pakistan, whilst Amritsar became part of India. Some areas in west Punjab, including Lahore, RawalpindiMultan, and Gujrat, had a large Sikh and Hindu population, and many of the residents were attacked or killed. On the other side, in East Punjab, cities such as Amritsar, LudhianaGurdaspur, and Jalandhar had a majority Muslim population, of which thousands were killed or emigrated.

[edit]Bengal

The province of Bengal was divided into the two separate entities of West Bengal belonging to India, and East Bengal belonging to Pakistan. East Bengal was renamed East Pakistan in 1955, and later became the independent nation of Bangladesh after theBangladesh Liberation War of 1971.
While the Muslim majority districts of Murshidabad and Malda were given to India, the Hindu majority district of Khulna and the majority Buddhist, but sparsely populated Chittagong Hill Tracts was given to Pakistan by the award.

[edit]Sindh

Hindu Sindhis were expected to stay in Sindh following Partition, as there were good relations between Hindu and Muslim Sindhis. At the time of Partition there were 1,400,000 Hindu Sindhis, though most were concentrated in cities such as HyderabadKarachi,Shikarpur, and Sukkur. However, because of an uncertain future in a Muslim country, a sense of better opportunities in India, and most of all a sudden influx of Muslim refugees from GujaratUttar PradeshBiharRajputana (Rajasthan) and other parts of India, many Sindhi Hindus decided to leave for India.
Problems were further aggravated when incidents of violence instigated by Muslim refugees broke out in Karachi and Hyderabad. According to the census of India 1951, nearly 776,000 Sindhi Hindus moved into India.[11] Unlike the Punjabi Hindus and Sikhs, Sindhi Hindus did not have to witness any massive scale rioting; however, their entire province had gone to Pakistan thus they felt like a homeless community. Despite this migration, a significant Sindhi Hindu population still resides in Pakistan's Sindh province where they number at around 2.28 million as per Pakistan's 1998 census while the Sindhi Hindus in India as per 2001 census of India were at 2.57 million. However Some bordering Districts in Sindh was Hindu Majority like Tharparkar DistrictUmerkotMirpurkhasSanghar andBadin, but number is reducing, in fact Umerkot, still has majority Hindu in district.[12]
Hindus as percentage of total population in districts of Pakistan. It can be seen that there are still many Hindus in the bordering area of Sindh

[edit]Perspectives

TIME magazine 27 October 1947 coverBoris Artzybasheff depicting a self-hurting goddess Kali as a symbol of the partition of India. The caption says: "INDIA: Liberty and death."
The Partition was a highly controversial arrangement, and remains a cause of much tension on the Indian subcontinenttoday. The British ViceroyLord Mountbatten of Burma has not only been accused of rushing the process through, but also is alleged to have influenced the Radcliffe Line in India's favour.[13][14] However, the commission took so long to decide on a final boundary that the two nations were granted their independence even before there was a defined boundary between them. Even then, the members were so distraught at their handiwork (and its results) that they refused compensation for their time on the commission.[citation needed]
Some critics allege that British haste led to the cruelties of the Partition.[15] Because independence was declared prior to the actual Partition, it was up to the new governments of India and Pakistan to keep public order. No large population movements were contemplated; the plan called for safeguards for minorities on both sides of the new border. It was a task at which both states failed. There was a complete breakdown of law and order; many died in riots, massacre, or just from the hardships of their flight to safety. What ensued was one of the largest population movements in recorded history. According to Richard Symonds: At the lowest estimate, half a million people perished and twelve million became homeless.[16]
However, many argue that the British were forced to expedite the Partition by events on the ground.[17] Once in office, Mountbatten quickly became aware if Britain were to avoid involvement in a civil war, which seemed increasingly likely, there was no alternative to partition and a hasty exit from India.[17] Law and order had broken down many times before Partition, with much bloodshed on both sides. A massive civil war was looming by the time Mountbatten became Viceroy. After the Second World War, Britain had limited resources,[18] perhaps insufficient to the task of keeping order. Another viewpoint is that while Mountbatten may have been too hasty he had no real options left and achieved the best he could under difficult circumstances.[19] The historian Lawrence James concurs that in 1947 Mountbatten was left with no option but to cut and run. The alternative seemed to be involvement in a potentially bloody civil war from which it would be difficult to get out.[20]
Conservative elements in England consider the partition of India to be the moment that the British Empire ceased to be a world power, following Curzon's dictum: "the loss of India would mean that Britain drop straight away to a third rate power."[21]

[edit]Delhi Punjabi refugees

Refugees on train roof during Partition
An estimated 25 million Hindus, Muslims and Sikhs (1947–present) crossed the newly drawn borders to reach their new homelands. These estimates are based on comparisons of censuses from 1941 and 1951 with adjustments for normal population growth in the areas of migration. In northern India – undivided Punjab and North Western Frontier Province (NWFP) – nearly 12 million were forced to move from as early as March 1947 following the Rawalpindi violence.
Delhi received the largest number of refugees for a single city – the population of Delhi grew rapidly in 1947 from under 1 million (917.939) to a little less than 2 million (1.744.072) between the period 1941–1951.[22] The refugees were housed in various historical and military locations such as the Purana QilaRed Fort, and military barracks in Kingsway (around the present Delhi university). The latter became the site of one of the largest refugee camps in northern India with more than 35,000 refugees at any given time besides Kurukshetra camp near Panipat.
The camp sites were later converted into permanent housing through extensive building projects undertaken by the Government of India from 1948 onwards. A number of housing colonies in Delhi came up around this period like Lajpat NagarRajinder NagarNizamuddin EastPunjabi Bagh, Rehgar Pura, Jungpura and Kingsway Camp.
A number of schemes such as the provision of education, employment opportunities, and easy loans to start businesses were provided for the refugees at the all-India level. The Delhi refugees, however, were able to make use of these facilities much better than their counterparts elsewhere.[23]

[edit]Refugees settled in India

Many Sikhs and Hindu Punjabis migrated from Western Punjab and settled in the Indian parts of Punjab and Delhi. Hindus migrating from East Pakistan (now Bangladesh) settled across Eastern India and Northeastern India, many ending up in close-by states likeWest BengalAssam, and Tripura. Some migrants were sent to the Andaman islands where Bengali today form the largest linguistic group.
Photo of a railway station in Punjab. Many people abandoned their fixed assets and crossed newly formed borders.
Hindu Sindhis found themselves without a homeland. The responsibility of rehabilitating them was borne by their government. Refugee camps were set up for Hindu Sindhis. Many refugees overcame the trauma of poverty, though the loss of a homeland has had a deeper and lasting effect on their Sindhi culture. In 1967, the Government of India recognized Sindhias a fifteenth official language of India in two scripts.
In late 2004, the Sindhi diaspora vociferously opposed a Public Interest Litigation in theSupreme Court of India which asked the Government of India to delete the word "Sindh" from the Indian National Anthem (written by Rabindranath Tagore prior to the partition) on the grounds that it infringed upon the sovereignty of Pakistan.

[edit]Refugees settled in Pakistan

Indo-East Pakistani, later Indo-Bangladesh enclaves created by the partition
In the aftermath of partition, a huge population exchange occurred between the two newly formed states. About 14.5 million people crossed the borders, including 8,226,000 Muslims who came to Pakistan from India while 7,249,000 Hindus and Sikhs moved to India from Pakistan. About 5.5 million settled in Punjab, Pakistan and around 1.5 million settled inSindh.
Most of those migrants who settled in Punjab, Pakistan came from the neighbouring Indian regions of PunjabHaryana and Himachal Pradesh while others were from Jammu and Kashmir and Rajasthan. On the other hand, most of those migrants who arrived in Sindh were primarily of Urdu-speaking background (termed the Muhajir people) and came from the northern and central urban centres of India, such as Uttar PradeshBiharMadhya Pradesh,Gujarat and Rajasthan via the Wahgah and Munabao borders; however a limited number of Muhajirs also arrived by air and on ships. People who wished to go to India from all over Sindh awaited their departure to India by ship at the Swaminarayan temple in Karachi and were visited by Muhammad Ali Jinnah, the founder of Pakistan.[24]
Later in 1950s, the majority of Urdu speaking refugees who migrated after the independence were settled in the port city of Karachi in southern Sindh and in the metropolitan cities ofHyderabadSukkurNawabshah and Mirpurkhas. In addition, some Urdu-speakers settled in the cities of Punjab, mainly in LahoreMultanBahawalpur and Rawalpindi. The number of migrants in Sindh was placed at over 540,000 of whom two-third were urban. In the case of Karachi, from a population of around 400,000 in 1947, it turned into more than 1.3 million in 1953.
Former President of Pakistan, General Pervez Musharraf, was of Urdu-speaking background and born in the Nahar Vali Haveli in DaryaganjDelhi, India. Several previous Pakistani leaders were also born in regions that are in India. Pakistan's first prime minister, Liaquat Ali Khan was born in Karnal (now in Haryana). The 7-year longest-serving Governor and martial law administrator of Pakistan's largest province, Balochistan, General Rahimuddin Khan, was born in the predominantly Pathan city of Kaimganj, which now lies in Uttar Pradesh. General Muhammad Zia-ul-Haq, who came to power in a military coup in 1977, was born in JalandharEast Punjab. The families of all four men opted for Pakistan at the time of Partition.

[edit]Aftermath

[edit]Restoration of women

Both sides promised each other that they would try to restore women abducted during the riots. The Indian government claimed that 33,000 Hindu and Sikh women were abducted, and the Pakistani government claimed that 50,000 Muslim women were abducted during riots. By 1949, there were governmental claims that 12,000 women had been recovered in India and 6,000 in Pakistan.[25] By 1954 there were 20,728 recovered Muslim women and 9032 Hindu and Sikh women recovered from Pakistan.[26] Many of the Muslim women refused to go back to Pakistan fearing that they would never be accepted by their family; similarly, the families of many Hindu and Sikh women refused to take back their relatives.[27]

[edit]India and Pakistan

Since Partition, with the riots and killings between the two religious communities, India and Pakistan have struggled to maintain normal relations. One of the biggest debates occurs over the disputed region of Kashmir, over which there have been three wars, and the reasons for the wars have related only to the confusion over partition. There have been four Indo-Pakistani wars:
  • Indo-Pakistani War of 1965: Pakistani-backed guerrillas invaded Jammu & Kashmir state of India. India is generally believed to have had the upper hand when a ceasefire was called. Whereas Pakistan believed its air-superiority over army and navy against India in the war to be key achievement and future success if war continued.[28]
India and Pakistan have also engaged in a nuclear arms race.

[edit]Treatment of minorities by Pakistan and India

1971 newsreel film about the partition and its aftermath
Before independence, Hindus and Sikhs had formed 20 per cent of the population of the areas now forming Pakistan, presently the percentage has "whittled down to one-and-a half percent".[30]:66 M. C. Chagla, in a speech at the UN General Assembly said that, Pakistan solved its minority problem by the ethnic cleansing of the Hindus, resulting in "hardly any" Hindu minority population in West Pakistan.[31] India suspected Pakistan of ethnic cleansing when millions of Hindus fled its province of East Pakistan in 1971.[32] Hindus remaining in Pakistan have been persecuted.[33][34] Yasmin Saikia writes that "although a large number of Muslims migrated to Pakistan in 1947, the bulk of the Muslim population stayed in their homelands in India".[35] According to Azim A. Khan Sherwani, the Hashimpura massacre case is "a chilling reminder of the apathy of the (Indian) state towards access to justice for Muslims", he writes that the case demonstrates that it is not just the Hindutva lobby, but also the Congress-Left and the socialists that are apathetic, and that Muslim "leaders" are more concerned with their personal ambitions and not with "issues afflicting the community".[36] In Pakistan, Hindus sometimes resent the alleged discrimination and forced conversion to Islam.[37][38]
Integration of refugee populations with their new countries did not always go smoothly. Some Urdu speaking Muslims (Muhajirs) who migrated to Pakistan have at certain times complained of discrimination in government employment. Municipal political conflict inKarachi, Pakistan's largest city, often pitted native Sindhis against Muhajir settlers. Sindhi, Bengali, and Punjabi refugees in India also experienced poverty and other social issues as they largely came empty handed. However, 50 years after Partition, almost all ex-refugees have managed to rebuild their lives.
All of the three nations resulting from the Partition of India have had to deal with endemic civil conflicts. Inside India, these have been largely due to inter-religious unrest and disruptive far left forces. Civil unrest inside India includes:
Within Pakistan, unrest is mainly because of ethnicities, with Sindhis, Bengalis, Balochis, all vying for more representation within the federation and in some cases, the creation of an independent state.

[edit]Current religious demographics of India proper and former East and West Pakistan

Despite the huge migrations during and after Partition, India is still home to the third largest Muslim population in the world (after Indonesia and Pakistan). The current estimates for India (see Demographics of India) are as shown below. Islamic Pakistan, the former West Pakistan, by contrast, has a much smaller minority population. Its religious distribution is below (see Demographics of Pakistan). As for Bangladesh, the former East Pakistan, the non-Muslim share is somewhat larger (see Demographics of Bangladesh):
India (2006 Est. 1,095 million vs. 1951 Census 361 million)
  • 80.5% Hindus (839 million)
  • 13.10% Muslims (143 million)
  • 2.31% Christians (25 million)
  • 2.00% Sikhs (21 million)
  • 1.94% Buddhists, Jains, Parsis and others (20 million)
Pakistan (2005 Est. 162 million vs. 1951 Census 34 million)
  • 98.0% Muslims (159 million)
  • 1.0% Christians (1.62 million)
  • 1.0% Hindus, Sikhs and others (1.62 million)
Bangladesh (2005 Est. 144 million vs. 1951 Census 42 million)
  • 86% Muslims (124 million)
  • 13% Hindus (18 million)
  • 1% Christians, Buddhists and Animists (1.44 million)
Both nations have to a great extent assimilated the refugees.

[edit]Artistic depictions of the Partition

The partition of India and the associated bloody riots inspired many creative minds in India and Pakistan to create literary/cinematic depictions of this event.[49] While some creations depicted the massacres during the refugee migration, others concentrated on the aftermath of the partition in terms of difficulties faced by the refugees in both side of the border. Even now, more than 60 years after the partition, works of fiction and films are made that relate to the events of partition.
Literature describing the human cost of independence and partition comprises Khushwant Singh's Train to Pakistan (1956), several short stories such as Toba Tek Singh (1955) by Saadat Hassan MantoUrdu poems such as Subh-e-Azadi (Freedom's Dawn, 1947) by Faiz Ahmad FaizBhisham Sahni's Tamas (1974), Manohar Malgonkar's A Bend in the Ganges (1965), and Bapsi Sidhwa's Ice-Candy Man (1988), among others.[50][51] Salman Rushdie's novel Midnight's Children (1980), which won the Booker Prize and theBooker of Bookers, weaved its narrative based on the children born with magical abilities on midnight of 14 August 1947.[51] Freedom at Midnight (1975) is a non-fiction work by Larry Collins and Dominique Lapierre that chronicled the events surrounding the first Independence Day celebrations in 1947. There is a paucity of films related to the independence and partition.[52][53][54] Early films relating to the circumstances of the independence, partition and the aftermath include Nemai Ghosh's Chinnamul (1950),[52] Dharmputra(1961),[55] Ritwik Ghatak's Meghe Dhaka Tara (1960), Komal Gandhar (1961), Subarnarekha (1962);[52][56] later films include Garm Hava (1973) and Tamas (1987).[55] From the late 1990s onwards, more films on this theme were made, including several mainstream films, such as Earth (1998), Train to Pakistan (1998) (based on the aforementined book), Hey Ram (2000), Gadar: Ek Prem Katha(2001), Pinjar (2003), Partition (2007) and Madrasapattinam (2010),.[55] The biopics Gandhi (1982), Jinnah (1998) and Sardar (1993) also feature independence and partition as significant events in their screenplay.

[edit]See also

[edit]References

  1. ^ William Dwight Whitney (1906). The Century Dictionary and Cyclopedia: Cyclopedia of namesCentury Company. Retrieved 17 June 2012. "Hindustani. One of the languages of Hindustan, a form of Hindi which grew up in the camps of the Mohammedan conquerors of India, since the 11th century, as a medium of communication between them and the subject population of central Hindustan. It is more corrupted in form than Hindi, and abounds with Persian and Arabic words. It is the official language and means of general intercourse throughout nearly the whole peninsula."
  2. ^ Metcalf & Metcalf 2006, pp. 221–222
  3. ^ Ambedkar, Bhimrao Ramji (1945). Pakistan or the Partition of India. Mumbai: Thackers.
  4. ^ Hanson, Eric O.. Religion and politics in the international system today. Cambridge University Press,. p. 200. ISBN 0-521-61781-2. Retrieved 9 December 2011.
  5. ^ Jalal, Ayesha Jalal (1985). The Sole Spokesman: Jinnah, The Muslim League and the Demand Pakistan. Cambridge University Press.
  6. ^ Wolpert, Stanley. A New History of India.
  7. ^ Sankar Ghose, Jawaharlal Nehru, a biography (1993), p. 181
  8. ^ Thomas R. G. C., 'Nations, States, and Secession: Lessons from the Former Yugoslavia', in Mediterranean Quarterly, Volume 5 Number 4 (Duke University Press, Fall 1994), pp. 40–65
  9. a b c d e (Spate 1947, pp. 126–137)
  10. ^ Death toll in the partitionUsers.erols.com.
  11. ^ Markovits, Claude (2000). The Global World of Indian Merchants, 1750–1947Cambridge University Press. p. 278.ISBN 0-521-62285-9.
  12. ^ http://pakistanhinducouncil.org/hindupopulation.asp
  13. ^ K. Z. Islam, 2002, The Punjab Boundary Award,Inretrospect[dead link]
  14. ^ Partitioning India over lunch, Memoirs of a British civil servant Christopher Beaumont. BBC News (10 August 2007).
  15. ^ Stanley Wolpert, 2006, Shameful Flight: The Last Years of the British Empire in India, Oxford University Press, ISBN 0-19-515198-4
  16. ^ Richard Symonds, 1950, The Making of Pakistan, London, OCLC 245793264, p 74
  17. a b Lawrence J. Butler, 2002, Britain and Empire: Adjusting to a Post-Imperial World, p. 72
  18. ^ Lawrence J. Butler, 2002, Britain and Empire: Adjusting to a Post-Imperial World, p 72
  19. ^ Ronald Hyam, Britain's Declining Empire: The Road to Decolonisation, 1918–1968, page 113; Cambridge University Press, ISBN 0-521-86649-9, 2007
  20. ^ Lawrence James, Rise and Fall of the British Empire
  21. ^ Judd, Dennis, The Lion and the Tiger: The rise and Fall of the British Raj,1600–1947. Oxford University Press: New York. (2010) p. 138.
  22. ^ Census of India, 1941 and 1951.
  23. ^ Kaur, Ravinder (2007). Since 1947: Partition Narratives among Punjabi Migrants of DelhiOxford University Press.ISBN 978-0-19-568377-6.
  24. ^ Vazira Fazila-Yacoobali Zamindar (2007). The long partition and the making of modern South Asia. Columbia University Press. Retrieved 22 May 2009. Page 52
  25. ^ Perspectives on Modern South Asia: A Reader in Culture, History, and ... – Kamala Visweswara. nGoogle Books.in (16 May 2011).
  26. ^ Borders & boundaries: women in India's partition – Ritu Menon, Kamla Bhasi. nGoogle Books.in (24 April 1993).
  27. ^ Embodied violence: Communalising women's sexuality in South Asia – Kumari Jayawardena, Malathi de Alwi. sGoogle Books.in.
  28. ^ The 1965 war with Pakistan – Encyclopædia Britannica
  29. ^ India encircles rebels on Kashmir mountaintop[dead link],CNN
  30. ^ Outlook. Hathway Investments Pvt Ltd. 2003. Retrieved 25 March 2012.
  31. ^ Jai Narain Sharma (1 January 2008). Encyclopaedia of eminent thinkers. Concept Publishing Company. pp. 20–.ISBN 978-81-8069-493-6. Retrieved 25 March 2012.
  32. ^ Rainer Münz; Myron Weiner (1997). Migrants, refugees, and foreign policy: U.S. and German policies toward countries of origin. Berghahn Books. pp. 276–. ISBN 978-1-57181-087-8. Retrieved 25 March 2012.
  33. ^ US Congress religious freedom report on Pakistan, 2006. State.gov.
  34. ^ US Congress religious freedom report on Pakistan, 2004. State.gov.
  35. ^ Yasmin Saikia (2005). Assam and India: fragmented memories, cultural identity, and the Tai-Ahom struggle. Permanent Black. p. 44. ISBN 978-81-7824-123-4. Retrieved 25 March 2012.
  36. ^ Khan Sherwani, Azim A. (26 September 2006). "Hashimpura Muslim Massacre Trial Reopens: Can Justice Be Expected?".Countercurrents.org. Kumaranalloor PO, Kottayam District, Kerala. Retrieved 25 March 2012.
  37. ^ "In pictures: Hindus in Pakistan". BBC News. Retrieved 4 July 2012.
  38. ^ Walsh, DEclan (25 March 2012). "In Pakistan, Hindus Say Woman's Conversion to Islam Was Coerced"New York Times. Retrieved 6 July 2012.
  39. ^ Kumar, Ram Narayan, et al., Reduced to Ashes: The Insurgency and Human Rights in Punjab, p. IV.
  40. ^ The Kashmiri Pandits: An Ethnic Cleansing the World Forgot,South Asia Terrorism Portal
  41. ^ Back to roots: Kashmiri Pandit youth fight back,Rediff.com
  42. ^ Katzman, Joe. (30 October 2005) Kashmir's Ethnic Cleansing & the Strangling of Tolerant Islam. Windsofchange.net.
  43. ^ The South Asian Overlooked and ignored – Kashmiri Hindus
  44. ^ Panun Kashmir. Panun Kashmir.
  45. ^ Rediff Has the peace process forgotten the Pandits
  46. ^ [1][dead link]
  47. ^ http://www.fas.org/news/pakistan/1994/940622-pak.htm
  48. ^ Leading News Resource of Pakistan. Daily Times (14 June 2005).
  49. ^ Cleary, Joseph N. (3 January 2002). Literature, Partition and the Nation-State: Culture and Conflict in Ireland, Israel and Palestine. Cambridge University Press. p. 104. ISBN 978-0-521-65732-7. Retrieved 27 July 2012. "The partition of India figures in a goo deal of imaginative writing..."
  50. ^ Bhatia, Nandi (1996). "Twentieth Century Hindi Literature". In Natarajan, Nalini. Handbook of Twentieth-Century Literatures of IndiaGreenwood Publishing Group. pp. 146–147. ISBN 978-0-313-28778-7. Retrieved 27 July 2012.
  51. a b Roy, Rituparna (15 July 2011). South Asian Partition Fiction in English: From Khushwant Singh to Amitav Ghosh.Amsterdam University Press. pp. 24–29. ISBN 978-90-8964-245-5. Retrieved 27 July 2012.
  52. a b c Mandal, Somdatta (2008). "Constructing Post-partition Bengali Cultural Identity through Films". In Bhatia, Nandi; Roy, Anjali Gera. Partitioned Lives: Narratives of Home, Displacement, and Resettlement. Pearson Education India. pp. 66–69. ISBN 978-81-317-1416-4. Retrieved 27 July 2012.
  53. ^ Dwyer, R. (2010). "Bollywood's India: Hindi Cinema as a Guide to Modern India". Asian Affairs 41 (3): 381–398.doi:10.1080/03068374.2010.508231. edit (subscription required)
  54. ^ Sarkar, Bhaskar (29 April 2009). Mourning the Nation: Indian Cinema in the Wake of PartitionDuke University Press. p. 121. ISBN 978-0-8223-4411-7. Retrieved 27 July 2012.
  55. a b c Vishwanath, Gita; Malik, Salma (2009). "Revisiting 1947 through Popular Cinema: a Comparative Study of India and Pakistan" (PDF). Economic and Political Weekly XLIV (36): 61–69. Retrieved 27 July 2012.
  56. ^ Raychaudhuri, Anindya (2009). "Resisting the Resistible: Re-writing Myths of Partition in the Works of Ritwik Ghatak". Social Semiotics 19 (4): 469–481.doi:10.1080/10350330903361158.(subscription required)

[edit]Further reading

Academic studies
  • Ishtiaq Ahmed, Ahmed, Ishtiaq. 2011. The Punjab Bloodied, Partitioned and Cleansed: Unravelling the 1947 Tragedy through Secret British Reports and First Person Account. New Delhi: RUPA Publications. 808 pages. ISBN 978-81-291-1862-2
  • Ansari, Sarah. 2005. Life after Partition: Migration, Community and Strife in Sindh: 1947—1962. Oxford, UK: Oxford University Press. 256 pages. ISBN 0-19-597834-X.
  • Butalia, Urvashi. 1998. The Other Side of Silence: Voices from the Partition of India. Durham, NC: Duke University Press. 308 pages. ISBN 0-8223-2494-6
  • Butler, Lawrence J. 2002. Britain and Empire: Adjusting to a Post-Imperial World. London: I.B.Tauris. 256 pages. ISBN 1-86064-449-X
  • Chakrabarty; Bidyut. 2004. The Partition of Bengal and Assam: Contour of Freedom (RoutledgeCurzon, 2004) online edition
  • Chatterji, Joya. 2002. Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition, 1932—1947. Cambridge and New York: Cambridge University Press. 323 pages. ISBN 0-521-52328-1.
  • Chester, Lucy P. 2009. Borders and Conflict in South Asia: The Radcliffe Boundary Commission and the Partition of Punjab.[dead link] Manchester University Press. ISBN 978-0-7190-7899-6.
  • Gilmartin, David. 1988. Empire and Islam: Punjab and the Making of Pakistan. Berkeley: University of California Press. 258 pages.ISBN 0-520-06249-3.
  • Gossman, Partricia. 1999. Riots and Victims: Violence and the Construction of Communal Identity Among Bengali Muslims, 1905–1947. Westview Press. 224 pages. ISBN 0-8133-3625-2
  • Hansen, Anders Bjørn. 2004. "Partition and Genocide: Manifestation of Violence in Punjab 1937–1947", India Research Press. ISBN 978-81-87943-25-9.
  • Harris, Kenneth. Attlee (1982) pp 355–87
  • Hasan, Mushirul (2001), India's Partition: Process, Strategy and Mobilization, New Delhi: Oxford University Press, 444 pages,ISBN 0-19-563504-3.
  • Herman, Arthur. Gandhi & Churchill: The Epic Rivalry that Destroyed an Empire and Forged Our Age (2009)
  • Ikram, S. M. 1995. Indian Muslims and Partition of India. Delhi: Atlantic. ISBN 81-7156-374-0
  • Jain, Jasbir (2007), Reading Partition, Living Partition, Rawat Publications, 338 pages, ISBN 81-316-0045-9
  • Jalal, Ayesha (1993), The Sole Spokesman: Jinnah, the Muslim League and the Demand for Pakistan, Cambridge, UK: Cambridge University Press, 334 pages, ISBN 0-521-45850-1
  • Kaur, Ravinder. 2007. "Since 1947: Partition Narratives among Punjabi Migrants of Delhi". Oxford University Press. ISBN 978-0-19-568377-6.
  • Khan, Yasmin (2007), The Great Partition: The Making of India and Pakistan, New Haven and London: Yale University Press, 250 pages, ISBN 0-300-12078-8
  • Khosla, G. D. Stern reckoning : a survey of the events leading up to and following the partition of India New Delhi: Oxford University Press:358 pages Published: February 1990 ISBN 0-19-562417-3
  • Lamb, Alastair (1991), Kashmir: A Disputed Legacy, 1846–1990, Roxford Books, ISBN 0-907129-06-4
  • Metcalf, BarbaraMetcalf, Thomas R. (2006), A Concise History of Modern India (Cambridge Concise Histories), Cambridge and New York: Cambridge University Press. Pp. xxxiii, 372, ISBN 0-521-68225-8
  • Moon, Penderel. (1999). The British Conquest and Dominion of India (2 vol. 1256pp)
  • Moore, R.J. (1983). Escape from Empire: The Attlee Government and the Indian Problem, the standard history of the British position
  • Nair, Neeti. (2010) Changing Homelands: Hindu Politics and the Partition of India
  • Page, David, Anita Inder Singh, Penderel Moon, G. D. Khosla, and Mushirul Hasan. 2001. The Partition Omnibus: Prelude to Partition/the Origins of the Partition of India 1936-1947/Divide and Quit/Stern Reckoning. Oxford University Press. ISBN 0-19-565850-7
  • Pal, Anadish Kumar. 2010. World Guide to the Partition of INDIA. Kindle Edition: Amazon Digital Services. 282 KB. ASIN B0036OSCAC
  • Pandey, Gyanendra. 2002. Remembering Partition:: Violence, Nationalism and History in India. Cambridge University Press. 232 pages. ISBN 0-521-00250-8 online edition
  • Panigrahi; D.N. 2004. India's Partition: The Story of Imperialism in Retreat London: Routledge. online edition
  • Raja, Masood Ashraf. Constructing Pakistan: Foundational Texts and the Rise of Muslim National Identity, 1857–1947, Oxford 2010,ISBN 978-0-19-547811-2
  • Raza, Hashim S. 1989. Mountbatten and the partition of India. New Delhi: Atlantic. ISBN 81-7156-059-8
  • Shaikh, Farzana. 1989. Community and Consensus in Islam: Muslim Representation in Colonial India, 1860—1947. Cambridge, UK: Cambridge University Press. 272 pages. ISBN 0-521-36328-4.
  • Singh, Jaswant. (2011) Jinnah: India, Partition, Independence
  • Talbot, Ian and Gurharpal Singh (eds). 1999. Region and Partition: Bengal, Punjab and the Partition of the Subcontinent. Oxford and New York: Oxford University Press. 420 pages. ISBN 0-19-579051-0.
  • Talbot, Ian. 2002. Khizr Tiwana: The Punjab Unionist Party and the Partition of India. Oxford and New York: Oxford University Press. 216 pages. ISBN 0-19-579551-2.
  • Talbot, Ian. 2006. Divided Cities: Partition and Its Aftermath in Lahore and Amritsar. Oxford and Karachi: Oxford University Press. 350 pages. ISBN 0-19-547226-8.
  • Wolpert, Stanley. 2006. Shameful Flight: The Last Years of the British Empire in India. Oxford and New York: Oxford University Press. 272 pages. ISBN 0-19-515198-4.
  • Wolpert, Stanley. 1984. Jinnah of Pakistan
Articles
  • Brass, Paul. 2003. The partition of India and retributive genocide in the Punjab,1946–47: means, methods, and purposesWashington University
  • Gilmartin, David. 1998. "Partition, Pakistan, and South Asian History: In Search of a Narrative." The Journal of Asian Studies, 57(4):1068–1095.
  • Jeffrey, Robin. 1974. "The Punjab Boundary Force and the Problem of Order, August 1947" – Modern Asian Studies 8(4):491–520.
  • Kaur Ravinder. 2007. "India and Pakistan: Partition Lessons". Open Democracy.
  • Kaur, Ravinder. 2006. "The Last Journey: Social Class in the Partition of India". Economic and Political Weekly, June 2006. www.epw.org.in
  • Khan, Lal (2003). Partition – Can it be undone?. Wellred Publications. p. 228. ISBN 1-900007-15-0.
  • Mookerjea-Leonard, Debali. 2005. "Divided Homelands, Hostile Homes: Partition, Women and Homelessness". Journal of Commonwealth Literature, 40(2):141–154.
  • Mookerjea-Leonard, Debali. 2004. "Quarantined: Women and the Partition". Comparative Studies of South Asia, Africa and the Middle East, 24(1): 35–50.
  • Morris-Jones. 1983. "Thirty-Six Years Later: The Mixed Legacies of Mountbatten's Transfer of Power". International Affairs (Royal Institute of International Affairs), 59(4):621–628.
  • Noorani, A. G. (22 Dec. 2001 – 4 Jan. 2002). "The Partition of India"Frontline (magazine) 18 (26). Retrieved 12 October 2011.
  • Spate, O. H. K. (1947), "The Partition of the Punjab and of Bengal", The Geographical Journal 110 (4/6): 201–218
  • Spear, Percival. 1958. "Britain's Transfer of Power in India." Pacific Affairs, 31(2):173–180.
  • Talbot, Ian. 1994. "Planning for Pakistan: The Planning Committee of the All-India Muslim League, 1943–46". Modern Asian Studies, 28(4):875–889.
Visaria, Pravin M. 1969. "Migration Between India and Pakistan, 1951–61" Demography, 6(3):323–334.
  • Chopra, R. M., "The Punjab And Bengal", Calcutta, 1999.
Primary sources
  • Mansergh, Nicholas, and Penderel Moon, eds. The Transfer of Power 1942–47 (12 vol., London: HMSO . 1970–83) comprehensive collection of British official and private documents
  • Moon, Penderel. (1998) Divide & Quit
Popularizations
  • Collins, Larry and Dominique Lapierre: Freedom at Midnight. London: Collins, 1975. ISBN 0-00-638851-5
  • Zubrzycki, John. (2006) The Last Nizam: An Indian Prince in the Australian Outback. Pan Macmillan, Australia. ISBN 978-0-330-42321-2.
Memoirs and oral history
  • Bonney, Richard; Hyde, Colin; Martin, John. "Legacy of Partition, 1947–2009: Creating New Archives from the Memories of Leicestershire People," Midland History, (Sept 2011), Vol. 36 Issue 2, pp 215–224
  • Azad, Maulana Abul KalamIndia Wins Freedom, Orient Longman, 1988. ISBN 81-250-0514-5
  • Mountbatten, Pamela. (2009) India Remembered: A Personal Account of the Mountbattens During the Transfer of Power
Historical-Fiction

[edit]External links

Bibliographies
Other links

1 comment:

  1. বাংলা শুধুই বাংলা: শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? পলাশ বিশ্বাস >>>>> Download Now

    >>>>> Download Full

    বাংলা শুধুই বাংলা: শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? পলাশ বিশ্বাস >>>>> Download LINK

    >>>>> Download Now

    বাংলা শুধুই বাংলা: শরণার্থী সমস্যা নিয়ে সত্যি কারও মাথা ব্যথা হয়? বাঙ্গালিদের হয়? পলাশ বিশ্বাস >>>>> Download Full

    >>>>> Download LINK

    ReplyDelete